সময়ের জনমাধ্যম

মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করতেই রাজনীতিতে জড়ান সাকিব

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিতে এসে নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া সাকিব আল হাসান অবশেষে তার রাজনৈতিক জীবন নিয়ে কথা বলেছেন। ছয় মাসের সংক্ষিপ্ত রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন, বিতর্ক এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে সম্প্রতি একটি ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খোলামেলা আলোচনা করেন তিনি।

বিতর্কিত ছবি, দর্শকের সঙ্গে বিবাদ, হত্যা মামলা এবং দুর্নীতির অভিযোগের মতো ঘটনাগুলো সাকিবের রাজনৈতিক জীবনকে জটিল করে তুলেছিল। তবে, সাকিব এখনও মনে করেন, তার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল।

রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে সাকিব বলেন, ‘দেখুন, ব্যাপারটা হলো, রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যদি আমার জন্য ভুল হয়ে থাকে, তবে ভবিষ্যতে যে কেউ রাজনীতিতে যোগ দিলে সেটাও ভুলই হবে। ডাক্তার, ব্যারিস্টার, ব্যবসায়ী—যে কেউ রাজনীতিতে যোগ দিলেই ভুল হতে পারে। রাজনীতিতে যোগ দেওয়া যেকোনো নাগরিকের অধিকার এবং যে কেউ তা করতে পারে। মানুষ আপনাকে ভোট দেবে কি দেবে না, সেটা তাদের ব্যাপার। আমি যখন যোগ দিয়েছিলাম, তখন আমি সঠিক ছিলাম বলে মনে করি এবং আমি এখনো বিশ্বাস করি যে আমি সঠিক ছিলাম। কারণ, আমার উদ্দেশ্য ছিল মাগুরার মানুষের জন্য কাজ করা। আমি অনুভব করেছি, আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারি। আমি এটাও অনুভব করেছি যে মাগুরার মানুষ আমাকে চেয়েছিল।’

ভবিষ্যতে নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস ব্যক্ত করে সাকিব বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমার নির্বাচনী এলাকায় একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়েছে এবং আমি মনে করি না যে আমি যদি আবার দাঁড়াই, তবে অন্য কেউ জিতবে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই আমি যা করেছি, তাতে আমি কোনো ভুল দেখি না। যখন আমি নির্বাচনে দাঁড়াই, তখন আমি মাগুরার মানুষের সেবা করার সুযোগ চেয়েছিলাম। মানুষ আমাকে সেই সুযোগ দিয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, আমি তাদের যেভাবে সেবা করতে চেয়েছিলাম, সেভাবে পারিনি। এটা আমি মেনে নিয়েছি।’

সাকিব আরও বলেন, ‘আমি সব সময় মনে করি, যদি কেউ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে চায়, তবে সিস্টেমের ভেতরে আসতে হবে। কারণ, সিস্টেমের অংশ না হয়ে আপনি সেটাকে কীভাবে বদলাবেন? যেসব মানুষ এখন দেশ চালাচ্ছে, তারা যদি সিস্টেমের বাইরে থাকত, তাহলে তারা যে পরিবর্তনগুলো চেয়েছিল তা কি আনতে পারতো?’

সাকিব তার বিশ্বাসের কথা জানিয়ে বলেন, ‘দেখুন, অনেকে বলতে পারে আমার রাজনীতিতে আসার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। কিন্তু যারা এসব বলছে, তাদের বেশির ভাগই আমার এলাকার ভোটার নয়। মাগুরার ভোটাররা ভিন্নভাবে চিন্তা করে। আমি এখনো বিশ্বাস করি, যদি আজ আবার নির্বাচনে অংশ নিই, তবে মাগুরার মানুষ আমাকেই আবার ভোট দেবে। কারণ, তারা বিশ্বাস করে আমি তাদের জন্য কিছু করতে পারব। এটা আমার বিশ্বাস এবং আমি এ জন্যই রাজনীতিতে এসেছি।’

ছয় মাসের রাজনৈতিক জীবন নিয়ে সাকিব বলেন, ‘আমি রাজনীতিতে মাত্র ছয় মাস ছিলাম। নির্বাচনের পর আমার মনে হয়, আমি তিন দিনের জন্য মাগুরা গিয়েছিলাম। আমি চার-পাঁচ মাস ধরে ক্রিকেট খেলেছি এবং একই পরিমাণ সময় দেশের বাইরে ছিলাম। ফলে আমি রাজনীতিতে ঠিকঠাক জড়িত হওয়ার সময়টাই–বা কোথায় পেলাম!’

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার কথাও উল্লেখ করেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাকে বলেছিলেন, ‘‘তোমার রাজনীতি করতে হবে না, তুমি শুধু ক্রিকেটে মন দাও।’’ আমি সে পরামর্শ মেনে চলেছি। আমার আর কোনো এজেন্ডা ছিল না। সব সময় ভেবেছি, যত দিন ক্রিকেটে আছি, সেটাই আমার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত।

আমি খুব সহজেই ক্রিকেট ছাড়তে পারতাম এবং পুরোপুরি রাজনীতিবিদ হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু আমার পরিকল্পনা ছিল চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলা এবং তারপর ধীরে ধীরে আরও ভালোভাবে সবকিছু বোঝার পর রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়া। মানুষের জন্য কাজ করা।’