যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের জন্য একটি বড় আবাসন প্রকল্প ঘিরে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। পূর্ব টেক্সাসের ইস্ট প্লানো এলাকায় এক হাজার নতুন বাড়ি, কমিউনিটি সেন্টার, স্কুল, হাসপাতাল, মসজিদ ও ইসলামিক বেসরকারি স্কুল নির্মাণের পরিকল্পনা করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ইমরান চৌধুরী। তবে এই উদ্যোগের শুরু থেকেই বাধার মুখে পড়েছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, অজ্ঞাত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করতে হুমকি দিচ্ছে ইমরান চৌধুরীকে। তাদের মতে, এই ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে তা স্থানীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী হবে।
অন্যদিকে, টেক্সাসের প্রভাবশালী রক্ষণশীল ও খ্রিস্টান নেতারাও এই পরিকল্পনাকে ভালোভাবে নিচ্ছেন না। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট এই প্রকল্পটিকে “ইসলামিক আইন প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, “টেক্সাসে শরিয়াহ আইন চালু করতে দেওয়া হবে না। কোনো ‘নো গো জোন’ও তৈরি করতে দেওয়া হবে না।”

তবে ইমরান চৌধুরী এসব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন, এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি। তিনি আরও জানান, “আমরা অঙ্গরাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত আইন মেনেই এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এটি সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে এবং যে কেউ এর সুবিধা নিতে পারবে।
এই বিতর্কের মধ্যেই চলতি সপ্তাহে সিনেটর জন করনিন এই প্রকল্পের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন। তার আশঙ্কা, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে টেক্সাসের ইহুদি ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্টের আরো কয়েকটি রাজ্যের মত টেক্সাসেও শরিয়াহ আইনবিরোধী বিল কার্যকর রয়েছে। বিদ্বেষবিরোধী সংগঠন সাউদার্ন পভার্টি ল সেন্টার এই বিলটিকে একটি অতি ডানপন্থী ষড়যন্ত্র বলে মনে করে। তাদের মতে, শরিয়াহ আইন নিয়ে ভুল ধারণা তৈরি করে একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে নিশানা করা হচ্ছে।
প্রায় ২০ বছর আগে ডালাসের উত্তরে প্লানোতে এপিক ইসলামিক কমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে সেখানে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের বসবাস এবং তাদের নিজস্ব মসজিদ রয়েছে।

এপিকের ইমাম ইয়াসির কাধি বলেন, “মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন থেকে অনেক মানুষ এখানে আসতে শুরু করেন। আমরা দেখলাম, জায়গাটি আমাদের জন্য পর্যাপ্ত নয়। মানুষ ক্রমেই বাড়তে থাকায় আমরা এটাকে সম্প্রসারণের চেষ্টা করছি। টেক্সাসের উষ্ণ আবহাওয়া, কম কর এবং ভালো খাবারের যোগান থাকায় মুসলিমরা এই রাজ্যকে পছন্দ করেন। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার কথা মাথায় রেখেই এই সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।”
প্রকল্পের বাস্তবায়নকারী সংস্থা ক্যাপিটাল পার্টনার্সের প্রেসিডেন্ট ইমরান চৌধুরী স্পষ্ট করে দাবি করেন, তারা কখনোই শরিয়াহ আইন নিয়ে কোনো আলোচনা করেননি। বরং প্রথম দিন থেকেই আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে রাজ্য ও ফেডারেল আইন মেনেই কাজ করছেন। বর্তমানে আবাসন প্রকল্পের প্লট বিক্রি শুরু হয়েছে এবং বেশ কিছু প্লট ইতোমধ্যেই বিক্রি হয়েছে।

তবে কলিন কাউন্টিতে অনুষ্ঠিত একটি সমাবেশে অনেকেই এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। আবাসন কোম্পানির আইনজীবী ড্যান কগডেল মনে করছেন, এই নেতিবাচক প্রচারণার কারণে প্রকল্পের অনুমোদন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হতে পারে।
এই পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে আধুনিক জীবনযাত্রার স্বপ্ন তৈরি হয়েছে, অন্যদিকে একটি অংশের মধ্যে দেখা দিয়েছে দ্বিধা ও আশংকা। এখন দেখার বিষয়, আইনি ও রাজনৈতিক বাধা পেরিয়ে ইমরান চৌধুরীর এই প্রকল্প শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখে কিনা।