পশ্চিম তীরে আবারও ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের হামলার শিকার হলেন এক নিরস্ত্র ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক। নিহত ব্যক্তির নাম সাইফুল্লাহ মুসাল্লেত, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের ট্যাম্পা শহরের বাসিন্দা ছিলেন। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে সাময়িকভাবে তিনি ফিলিস্তিনে অবস্থান করছিলেন। শুক্রবার (১১ জুলাই) রামাল্লার উত্তরের শহর সিনজিলে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে।
মুসাল্লেতের পরিবারের দাবি, এটি একটি ঠান্ডা মাথায় সংগঠিত পরিকল্পিত হত্যা। তার স্বজন ফাতমা মোহাম্মদ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, ‘সাইফুল্লাহ ছিল নিরস্ত্র, শান্তিপ্রিয়। তাকে যেভাবে হত্যা করা হয়েছে, তা শুধু বর্বরতাই নয়, মানবতাবিরোধী অপরাধ।’
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ওই একই ঘটনায় আরেকজন ফিলিস্তিনি নাগরিক মোহাম্মদ শালাবিও নিহত হয়েছেন, যাকে গুলি করে হত্যা করে সশস্ত্র বসতি স্থাপনকারীরা।
এ ঘটনায় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা নিহত মার্কিন নাগরিকের বিষয়ে অবগত। তবে এখনই কোন মন্তব্য করতে রাজি নয় যক্তরাষ্ট্র, নিহতের পরিবারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের সহিংসতার ইতিহাস দীর্ঘদিনের। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বহুবার জানিয়েছে, এসব স্থাপনাকারীরা প্রায়শই ফিলিস্তিনিদের বসতঘরে আগুন লাগানো, জমি দখল, যানবাহন ধ্বংস ও শারীরিক হেনস্থার মতো অপরাধ করে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব হামলার সময় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বসতি স্থাপনকারীদের সহযোগিতা করে, বরং ফিলিস্তিনিরা প্রতিরোধ গড়লে তারাই সেনাদের হাতে গুলিবিদ্ধ হন।
জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা পশ্চিম তীরের বসতিগুলোকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলেই বিবেচনা করে। তাদের মতে, এসব বসতি আসলে একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ, যার উদ্দেশ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে বিতাড়িত করা।
সাইফুল্লাহ মুসাল্লেতের পরিবারের সদস্য ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নীরবতায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা দাবি করছেন, একজন মার্কিন নাগরিককে বিদেশের মাটিতে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে—এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের আহ্বান, যুক্তরাষ্ট্র যেন এই ঘটনায় দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এবং হত্যাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনে।
সিনজিল শহরে ঘটে যাওয়া এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আবারও বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরেছে—ফিলিস্তিনিদের জীবন কতটা অনিরাপদ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিষয়ে কতটা উদাসীন।