কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা নিয়ে আজ সোমবার (৫ মে) জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি রুদ্ধদ্বার পরামর্শসভা আয়োজন করছে। ইসলামাবাদ বিষয়টি নিয়ে জরুরি বৈঠকের অনুরোধ জানানোর পরই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
পাকিস্তান ১৫ সদস্যবিশিষ্ট ক্ষমতাধর নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য এবং চলতি মে মাসে পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছে গ্রিস। পরিষদের স্থায়ী সদস্যরা হলো চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রিস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া ও সোমালিয়া।
নয়াদিল্লি থেকে পিটিআইয়ের খবরে বলা হয়েছে, ইসলামাবাদ ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার উত্তেজনা নিয়ে ‘রুদ্ধদ্বার পরামর্শ’ চেয়ে আবেদন জানালে আজ বিকেলে এই বৈঠক আয়োজনের সময় নির্ধারণ করে গ্রিস।
২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী এই দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তীব্র হয়।
এই পরিস্থিতিতে জাতিসংঘে গ্রিসের স্থায়ী প্রতিনিধি ও নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতি রাষ্ট্রদূত এভানজেলোস সেকেরিস বলেন, ‘যদি কেউ বৈঠকের অনুরোধ করে, তাহলে সেটা হওয়া উচিত। কারণ মতামত প্রকাশের সুযোগ থাকলে সেটা হয়তো উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত করতেও সাহায্য করতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখছি…তবে এটি সম্ভবত শিগগিরই ঘটতে পারে। আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
ভারত-পাকিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে পিটিআইয়ের প্রশ্নের জবাবে সেকেরিস বলেন, ‘এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোনো ঘটনার নিন্দা জানাই। পহেলগামে যেটা ঘটেছে, সেটা একটি জঘন্য সন্ত্রাসী হামলা, সেখানে নিরীহ বেসামরিক মানুষের প্রাণ গেছে। আমরা ভারতের সরকার, নেপালের সরকার ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আমরা সন্ত্রাসবাদের যেকোন রূপ, যেকোন জায়গায় ঘটলে তার নিন্দা করি। একই সঙ্গে আমরা এই অঞ্চলে বাড়তে থাকা উত্তেজনা নিয়ে উদ্বিগ্ন। দুটি বড় দেশ, অবশ্যই, ভারত পাকিস্তানের চেয়ে অনেক বড়।’
পহেলগাম হামলায় ২৬ জন বেসামরিক লোক নিহত হওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পরিষদের স্থায়ী সদস্য চীন ও পাকিস্তান ব্যতীত বাকি সব সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এই আলোচনায় তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘এই হামলার পরিকল্পনাকারী, পৃষ্ঠপোষক ও বাস্তবায়নকারীদের বিচারের আওতায় আনতেই হবে।’ তিনি গ্রিসের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ জেরাপেট্রিতিসের সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করেন এবং হামলার বিষয়ে মতবিনিময় করেন। জয়শঙ্কর বলেন, ‘সীমান্তপারের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গ্রিসের কঠোর অবস্থানকে আমরা স্বাগত জানাই। আমাদের কৌশলগত অংশীদারি আমাদের সম্পর্কের গভীরতাকে প্রতিফলিত করে।’ এছাড়াও তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য অস্থায়ী সদস্যদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গেও কথা বলেন।
গত শুক্রবার জাতিসংঘে পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আসিম ইফতিখার আহমদ এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা মনে করি, পরিস্থিতির বিচারে যখন প্রয়োজন মনে করব, তখনই বৈঠক ডাকার অধিকার আমাদের রয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে যা ঘটছে, তার পেছনে রয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর পরিস্থিতির পটভূমি। একটি ঘটনা ঘটেছে, সেটি সত্য, কিন্তু তারপর যা তৈরি হয়েছে, তা শুধু আঞ্চলিক নয়, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্যও হুমকি। তাই নিরাপত্তা পরিষদের এটি আলোচনায় আনার অধিকার রয়েছে। আমরা আগের ও বর্তমান সভাপতির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমরা নিবিড়ভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।’ গত সপ্তাহে তিনি জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে পরিস্থিতি সম্পর্কে তাকে অবহিত করেন।