সময়ের জনমাধ্যম

জাপানে অনেকের জীবন কাটছে ইন্টারনেট ক্যাফেতে

টোকিওর ঝলমলে প্রাণকেন্দ্রের আড়ালে আছে এক নির্মম বাস্তবতা। প্রাণবন্ত রাস্তাঘাট আর প্রযুক্তিগত বিস্ময়ের বাইরে, জাপানের জনসংখ্যার একটি অংশ ক্রমশঃ অপ্রত্যাশিত আশ্রয় খুঁজে নিচ্ছে।

ইন্টারনেট ক্যাফে, মূলত গভীর রাতে সাময়িক ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজন হয় এমন মানুষদের জন্য তৈরি হলেও, এই স্থাপনাগুলো জাপানের ইন্টারনেট ক্যাফে রিফিউজিদের শেষ আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে।

চাকরি হারানো, পারিবারিক ভাঙন, অথবা বিশ্বের অন্যতম ব্যয়বহুল শহরে বসবাসের খরচ বহন করতে না পেরে, এই ছোট কিউবিকলগুলোকে আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছেন জীবিকার প্রয়োজনে টোকিও শহরে অবস্থানরত জাপানিজ নাগরিকরা। প্রতি রাতে কয়েক হাজার ইয়েনের বিনিময়ে, একটি ছোট জায়গা, একটি কম্পিউটার, গোসলের জন্য ঝর্ণা ও লন্ড্রির সুবিধা পায় এই মানুষগুলো।

এটি জাপানি সমাজের একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যাকে তুলে ধরে: ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসনের অভাব। এর ফলে অনেকেই একটি চক্রে আটকা পড়েছেন, বাড়ি ভাড়া করার জন্য জামানতের জন্য যথেষ্ট অর্থ সঞ্চয় করতে হিমশিম খাচ্ছেন অনেকেই। একটি নির্দিষ্ট ঠিকানার অভাবে, স্থায়ী চাকরি পাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছে তাদের জন্য।

বিভিন্ন কারণে জাপানের মানুষ তাদের স্থায়ী ঠিকানা হারাচ্ছে এবং জীবন ধারণের তাগিদে বাধ্য হয়ে ছোট ইন্টারনেট ক্যাফের কামরাগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। যেখানে পা মেলে ঘুমানো দায়, চেয়ারে আধশোয়া হয়ে আর নয়তো  খুবই স্বল্প পরিসরের মেঝেতে শুয়ে কাটাতে হচ্ছে রাত। দিনের পর দিন এই পরিবেশে থাকার ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর।

তবে আশার কথা, জাপানে এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়ছে। অলাভজনক সংস্থাগুলো আবাসনের জন্য সাহায্য এবং কাউন্সিলিংয়ের জন্য এগিয়ে এসেছে। জাপানের সরকারও চাকুরীতে নিয়োগের নীতিমালা পরিবর্তন করে অধিকতর স্থায়ী নিয়োগের দিকে ঝুঁকছে।

যদিও ইন্টারনেট ক্যাফে অনেকের জন্য একটি অস্থায়ী সমাধান। তবে আশা করা যায়, বর্ধিত সমর্থন এবং কাঠামোগত পরিবর্তনের মাধ্যমে আরও স্থিতিশীল এবং মর্যাদাপূর্ণ জীবনের নিশ্চয়তা পাবেন জাপানের এই বঞ্চিত নাগরিকেরা।