সময়ের জনমাধ্যম

কৈশরেও জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

নয়নাভিরাম কৃষ্ণচূড়া যেন রঙিন মায়ায় জড়িয়েছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। চোখ ধাঁধানো টকটকে সিঁদুর বর্ণের কৃষ্ণচূড়া রক্তিম আভা ছড়িয়েছে ক্যাম্পাসে রাস্তায় সড়ক জুড়ে। গ্রীষ্মের শুরু থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস কৃষ্ণচূড়া, জারুল, সোনালুসহ নানা রঙের ফুলে ফুলে ভরে গেছে।

আজ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ১৫ বছরে পদার্পন করল। কৈশরের উচ্ছ্বলতা যেন বেরোবি ক্যাম্পাসের সবখানে ছড়িয়ে আছে। এখানে প্রবেশ  করলে প্রথমেই চোখে পড়ে কৃষ্ণচূড়াআবৃত একটি সুন্দর রাস্তা। সবুজ বেরোবির ৭৫ একরে গাঢ় লালের বিস্তার যেন বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তরে রক্তিম সূর্যের প্রতীক আর বাংলাদেশের জাতীয় পতাকারই প্রতিনিধিত্ব করছে। ৭৫ একরের এক খণ্ড সবুজায়তন এ ক্যাম্পাসে প্রায় ৪০০ প্রজাতির বৃক্ষ শোভা পায়। অথচও ২০০৮ সালে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়েছিল সরকারি টিটি (টিচার্স ট্রেনিং) কলেজের পরিত্যক্ত জীর্ণ ভবনে।

প্রথম ব্যাচে তিন’শ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল এবং প্রথম দফায় ১২ জন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছিল। শিক্ষার্থী ভর্তির তিন মাস পর শিক্ষক নিয়োগ হয়। ২০০৯ সালের চার এপ্রিল এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়।

প্রথম উপাচার্য ছিলেন ড. এম লুৎফর রহমান। মাত্র কয়েক মাস পরই দ্বিতীয় উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয় বেরোবিতে। বর্তমানে উপাচার্য হাসিবুর রশীদ এ বিশ্ববিদ্যালয়ের পঞ্চম উপাচার্য।

রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি অনেক পুরনো। দেশ বিভাগের পর থেকে রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবি উঠেছিল। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মেয়াদের শেষ বছর ২০০১ সালে ‘রংপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিল। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তরও উদ্বোধন করেন। স্থান নির্ধারণ, আইন প্রণয়ন, প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ সবই হয়েছিল। 

কিন্তু ২০০১ সালের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। পরে দুর্ভাগ্যজনকভাবে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম বন্ধ করা হয়। বিএনপির মেয়াদ শেষ হলে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে, তখন রংপুরের মানুষের দাবির মুখে ২০০৮ সালের ১২ অক্টোবর ‘রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়’ নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। রংপুরের সুধীজন বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন সমন্বয় পরিষদ গঠন করেছিল। আহ্বায়ক ছিলেন কারমাইকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ড. রেজাউল হক। এ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় গণমাধ্যমের ভূমিকাও ছিল উল্লেখ করার মতো। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালে রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় নাম পরিবর্তন করে রাখে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

শূন্য থেকে শুরু হওয়া একটি বিশ্ববিদ্যালয় এখন কৈশর পার করছে। প্রথম উপাচার্য দুই ফুট বাই দুই ফুট ছোট্ট দুটি টেবিল জোড়া দিয়ে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। এই অবস্থায় জনতা ব্যাংকের পক্ষ থেকে উন্নত টেবিল চেয়ারের ব্যবস্থা করা হয়। রিকশাযোগে প্রথম উপাচার্য অফিসে আসতেন। বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানার পর একটি গাড়ি ভাড়া নেওয়ার কথা বললে উপাচার্য একটি গাড়ি ভাড়া করেন। যেসব কক্ষে ক্লাস হতো সেগুলোর অবস্থা ছিল জীর্ণশীর্ণ। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত পড়ে থাকার কারণে সেগুলো প্রায় ব্যবহার অনুপযোগী ছিল।

ক্যাম্পাসে ছিল বলতে কেবল ‘নেই’ আর ‘নেই’ এর সমাহার। এখন স্থায়ী ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবন, প্রশাসনিক ভবন, হল, ক্যাফেটেরিয়া, গ্রন্থাগার, উপাচার্যের বাসভবন নির্মিত হয়েছে। আরও কিছু ভবন নির্মাণাধীন। ছয়টি বিভাগ নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলেও এখন বিভাগের সংখ্যা ২২টি। ৩০০ শিক্ষার্থী দিয়ে কার্যক্রম শুরু হলেও বর্তমানে শিক্ষার্থী সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গেল ১৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো সাংস্কৃতিক সংগঠন হয়েছে। কয়েক বছর ধরে নিয়মিত বইমেলার আয়োজন করা হয়। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আছে একঝাঁক তরুণ শিক্ষক। যাদের অনেকেই বিদেশের অনেক নামকরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে এসেছেন। এ বিশ্ববিদ্যলয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রি গ্রহণের জন্য অধ্যয়নরত। দেশের সব স্তরের চাকরিতেও আছে এখানকার শিক্ষার্থীরা। সাবেক উপাচার্যদের আমলে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ভরা ছিল। করোনাকালে তা বেড়ে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। বর্তমান উপাচার্য হাসিবুর রশীদের একাগ্রতায় এবং একনিষ্ঠ চেষ্টায় সেশনজট শূন্যে নেমে এসেছে। এ বছরই সেশনজট শূন্য হবে বলে আমরা আশা করছি। এ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্লোগান করা হয়েছে ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের অঙ্গীকার, সেশনজট মুক্ত হবে এবার।’

এই বিশ্ববিদ্যায় শিক্ষা ও গবেষণার উত্তম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমরা আশা করব এই ধারবাহিকতা অক্ষুণ্ন থাকবে।

মোঃ সাজেদুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়।

6 Comments

  • Wow, wonderful weblog structure! How lengthy have you ever been blogging for?
    you made running a blog look easy. The full look of your web
    site is magnificent, let alone the content! You
    can see similar here sklep internetowy

  • Howdy! Do you know if they make any plugins to assist with
    Search Engine Optimization? I’m trying to get my site
    to rank for some targeted keywords but I’m not seeing very good results.
    If you know of any please share. Thanks! I saw similar art here:
    Backlink Building

  • Hey there! Do you know if they make any plugins
    to assist with Search Engine Optimization? I’m trying to get my website to rank for
    some targeted keywords but I’m not seeing very good gains.

    If you know of any please share. Thanks! You can read similar article here:
    Hitman.agency

  • Wow, marvelous blog layout! How long have you ever been running
    a blog for? you make blogging look easy. The whole glance of your website is
    great, as neatly as the content! You can see similar here ecommerce

  • * * * Apple iPhone 15 Free: http://sbcpmc.com/upload/go.php * * * hs=4d9287915886209a3d5b8163f0f28108* says:

    qjk6jb

  • a0o1vu

leave a reply