সময়ের জনমাধ্যম

কাশ্মীর নিয়ে ভারত পাকিস্তানের শত্রুতার ইতিহাস

প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের আধার কাশ্মীর বারবার রক্তাক্ত হয়েছে। ১৯৪৭ সাল থেকে এই অঞ্চলটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর স্বাধীন থাকতে চেয়েছিল। তবে এই অঞ্চলের কিছু বাসিন্দা পাকিস্তান বা ভারতের সাথে যুক্ত হতেও সম্মত ছিল। এই অঞ্চলের  তৎকালীন শাসক মহারাজ হরি সিং প্রথমে স্বাধীন থাকতে চাইলেও, ১৯৪৭ সালের অক্টোবরে পাকিস্তানের দিক থেকে উপজাতিদের উপর আক্রমণের মুখে ভারতের সাহায্য চান এবং ভারতের সাথে যোগ দেন।

এর জের ধরে শুরু হয় ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। ভারত জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনা করে। জাতিসংঘ গণভোটের সুপারিশ করলেও, উভয় দেশ সৈন্য প্রত্যাহারে একমত হতে না পারায় তা আর অনুষ্ঠিত হয়নি। ফলে, ১৯৪৭ সালে একটি যুদ্ধবিরতি রেখা তৈরি হয়, যা কাশ্মীরকে দুই ভাগে বিভক্ত করে।

এরপর ১৯৬৫ সালে কাশ্মীরের মালিকানার দ্বন্দের জেরে যুদ্ধে জড়ায় দুই দেশ। ১৯৯৯ সালে কার্গিলে হয় আরও একটি স্বল্পস্থায়ী তীব্র সংঘাত। ততদিনে ভারত ও পাকিস্তান উভয়ই পরমাণু শক্তিধর দেশে পরিণত হয়। আজও দিল্লি ও ইসলামাবাদ পুরো কাশ্মীরের মালিকানা দাবি করে। তবে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণ এখনো দুই ভাগে বিভক্ত।

ভারত-শাসিত কাশ্মীরে কেন এত অস্থিরতা? এখানকার মানুষের মধ্যে আনুগত্যের প্রশ্নে ভিন্ন মত রয়েছে। অনেকেই ভারতের শাসন চায় না, তারা স্বাধীনতা অথবা পাকিস্তানের সাথে যুক্ত হতে চায়। এর অন্যতম কারণ হল এই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ মুসলিম। ১৯৮৯ সাল থেকে এখানে ভারতীয় শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহ চলছে, যাতে বহু মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

২০১৬ সালে উরিতে জঙ্গি হামলায় ১৯ জন ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর ভারত নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালায়। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলায় ৪০ জনের বেশি ভারতীয় আধাসামরিক কর্মী নিহত হলে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বিমান হামলা চালায় ভারত। সম্প্রতি পহেলগামে জঙ্গি হামলায় ২৬ জন পর্যটক নিহত হন, যা দুই দশকের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক বেসামরিক হতাহতের ঘটনা।

ভারত এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান ও পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, যা উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে দেয়। কাশ্মীর আজও বিশ্বের অন্যতম সামরিকীকৃত অঞ্চল। ২০০৩ সালে ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। কাশ্মীরের জনসংখ্যার একটি অংশ জঙ্গিবাদে জড়িয়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের জটিলতা নিরসন কঠিন থেকে কঠিনতর হয়েছে। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শান্তি আলোচনার আগ্রহ দেখালেও, পরবর্তীতে বিভিন্ন হামলায় সৃষ্ট অস্থিরতায় সেই প্রচেষ্টা থমকে যায়। সম্প্রতি পহেলগামে হামলার পর থেকে ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। যা চূড়ান্ত যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তৈরি করেছে।