যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটিতে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থী ও কর্মীদের হেনস্তা করার অভিযোগে আলোচিত সহকারী অধ্যাপক শাই ডেভিডাই অবশেষে পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘পারস্পরিক সম্মতিতে’ ৮ জুলাই থেকে ডেভিডাই আর এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যুক্ত থাকছেন না।
কী অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে?
ইসরায়েলপন্থী অবস্থানের জন্য পরিচিত এই ব্যবসায় প্রশাসনের অধ্যাপকের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ব্যক্তিগতভাবে শিক্ষার্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মীদের হুমকি ও হয়রানির অভিযোগ ছিল। গত অক্টোবর থেকে ক্যাম্পাসে তার প্রবেশাধিকার সীমিত করে কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ‘শাই ডেভিডাই কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করেছেন এবং আর এখানে শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত থাকবেন না। আমরা তার অবদানের জন্য ধন্যবাদ জানাই এবং ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা রইল।”
ডেভিডাইয়ের ক্ষোভ: “আমি পালিয়ে যাইনি, বিশ্বাস হারিয়েছি”
তবে নিজেই এক্স-এ দেওয়া পোস্টে ডেভিডাই বলেন, তিনি অন্য কোনো পেশাগত সুযোগের জন্য যাননি, বরং কলাম্বিয়ার ‘ইহুদিবিদ্বেষী, ইসরায়েলবিরোধী ও আমেরিকাবিরোধী’ পরিবেশে আর নিরাপদ বোধ করছিলেন না বলেই পদত্যাগ করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃত্বের ওপর তার ‘কোনো আস্থা নেই’ বলেও মন্তব্য করেন।
তদন্ত থেমে গেছে, তবে নির্দোষ প্রমাণ নয়
হয়রানির অভিযোগে ডেভিডাইয়ের বিরুদ্ধে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তদন্ত শুরু করেছিল কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ইন্সটিটিউশনাল ইকুয়ালিটি অফিস’। তবে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে দেওয়ার ফলে তদন্ত প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায় কোনো সিদ্ধান্ত বা শাস্তি ছাড়াই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কর্মচারী চাকরি ছাড়লে সাধারণত তদন্ত বন্ধ হয়ে যায় এবং এ ক্ষেত্রে কোনো ‘অপরাধ না করার ঘোষণা’ দেওয়া হয়নি। একইসঙ্গে, অভিযোগকারীদের কাছে পাঠানো এক চিঠিতেও উল্লেখ করা হয়, ‘তদন্ত বন্ধ হয়েছে, তবে নির্দোষতার কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়নি।’
একাধিক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড
ডেভিডাইয়ের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠে এসেছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- শিক্ষার্থীদের সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ ও অপমান করা
- ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের ‘হিটলার যুবক’ বলে সম্বোধন
- ন্যাশনাল গার্ড দিয়ে ক্যাম্পাসের আন্দোলন দমন করার আহ্বান
- একজন ফিলিস্তিনি কর্মীকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলে মার্কো রুবিওকে ট্যাগ করে পোস্ট করা
- কলাম্বিয়ার সাবেক শিক্ষক মোহাম্মদ আবদুকে এফবিআই ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে ট্যাগ করে ‘টার্গেট’ করা
উল্লেখযোগ্যভাবে, মাহমুদ খলিল নামে এক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী, যাকে ডেভিডাই পোস্টে টার্গেট করেছিলেন, তার দুইদিন পরই মার্কিন অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে। পরবর্তীতে ১০৪ দিন আটক থাকার পর ৮ মার্চ মুক্তি পান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমালোচনা, রাজনৈতিক চাপ ও সমাপ্তি
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে অনেকেই অভিযুক্ত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসনের চাপের কাছে নতিস্বীকার করার জন্য, বিশেষ করে ইহুদিবিদ্বেষ ও মধ্যপ্রাচ্যসংক্রান্ত আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে। ডেভিডাইয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পর তার পক্ষ থেকে প্রচুর সামাজিক মাধ্যম ক্যাম্পেইন চলে এবং তিনি নিজেও একাধিক ভিডিও ও পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তাদের আক্রমণ করেন। শেষ পর্যন্ত, কোনো শাস্তি ছাড়াই এবং তদন্ত অসমাপ্ত রেখেই ডেভিডাই কলাম্বিয়া ছেড়ে যান।