সময়ের জনমাধ্যম

রাবিজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্ক, ব্যানার টানিয়ে চুপচাপ প্রশাসন

সারাদেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। প্রতিদিন এই রোগে প্রাণহানী বাড়ছে। মশা নিধন বিশেষ করে এডিসের বংশবিস্তার রোধ করতে নাবারকম তৎপরতা চলছে দেশজুড়ে। কিন্তু এখনো নীরবতা পালন করছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ পর্যন্ত মশা নিধনের জন্য কেনও পদক্ষেপ নেয়নি তারা। ডেঙ্গু নিয়ে প্রচার-প্রচারণা করেই দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।

ক্যাম্পাস ও প্রতিটি আবাসিক হলে মাত্রাতিরিক্ত মশার উপদ্রব বাড়লেও মশক নিধনে ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করছে। রয়েছে ক্ষোভও। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে কেনা হয়েছিল দুটি ফগার মেশিন। কিন্তু মশক নিধনে মেশিনগুলো ব্যবহার করতে দেখা যায় না।

গত ১৭ জুলাই ডেঙ্গু প্রতিরোধ বিষয়ক সভা করে রাবি প্রশাসন। সভায় আবাসিক হলসমূহসহ ক্যাম্পাসে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা ও মশার বিস্তার রোধে যত্র-তত্র জমে থাকা পানি নিষ্কাশন ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত মশক নিধনে কোনও পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

এছাড়াও গত ১৯ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক মো. আবদুস সালাম স্বাক্ষরিত ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় বিধিমালা বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। সেখানে বলা হয় ব্যানার বানিয়ে ও লিফলেট বিতরণের ব্যবস্থাসহ ক্যাম্পাসে ৩/৪ জায়গায় বড় স্ট্যান্ড ব্যানার স্থাপন করে ডেঙ্গু সচেতনতা বৃদ্ধির কথা। সেখানেও মশক নিধন সম্পর্কিত কোনও তথ্য তুলে ধরেনি রাবি প্রশাসন।

শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ক্যাম্পাসে সন্ধ্যার পর থেকেই মশার উপদ্রব অপেক্ষাকৃত বেশি হয়। হলের কক্ষগুলোতে মশারি বা কয়েল ব্যবহার ছাড়া এক মিনিটও অবস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে মশার উপদ্রব মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি পেলেও বিশ্বিবদ্যিালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে এখন র্পযন্ত দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

ফেসবুকে এক রাবি শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘‘ব্যানার বানািই শেষ। আসল কাজ কে করবে? মশা তো আর নিজে থেকে সুইসাইড করবে না।’’

অন্য আরেক শিক্ষার্থী ব্যাঙ্গ করে লিখেছেন, ‘‘হ্যাঁ ব্যানার পড়ে মশা চলে যাবে! মশা তো এখানকার সরকারি চাকরিজীবী।’’

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের আলিম খান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কথা চিন্তা করে ক্যাম্পাসে মশক নিধনের ক্যাম্পেইন বৃদ্ধি করা দরকার। ড্রেইন বা যেখানে দীর্ঘদিন ধরে ময়লা জমে আছে সেসব জায়গায় মশক নিধনের দায়িত্ব প্রশাসনের আছে। আমরা চাই ক্যাম্পাসে মশক নিধনের নিয়মমাফিক কার্যক্রম প্রশাসন দায়িত্বের সাথে পালন করবে। আমরা শিক্ষার্থীরা ডেঙ্গুমুক্ত ক্যাম্পাস চাই।

এই বিষয়ে কথা হয় ডেঙ্গু প্রতিরোধ সভায় উপস্থিত থাকা ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আজিজ আবদুর রহমানের সাথে। তিনি বলেন, সভায় মশক নিধনের বিষয়ে কথা হয়নি। সভাটা ছিল মূলত ডেঙ্গু সচেতনতার জন্য। আমরা সেখানে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য যে বিষয়গুলো দরকার সেই তথ্যগুলো উপস্থাপন করেছি। তবে জানতে পেরেছি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সিটি করপোরেশনের সাথে কোনো একটা চুক্তি করেছে ফোগার মেশিন নিয়ে। সভাটিতে মূলত প্রচার সম্পর্কিত বিষয়গুলো আলোচনা হয়েছিল। 

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমরা সর্বোচ্চ সচেতন রয়েছি। আমরা ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিভিন্ন হলের সামনে, ভবনগুলোর সামনে ব্যানার, শিক্ষার্থীদের মাঝে লিফটে বিতরণসহ ক্যাম্পাসে সর্বত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছি। মশক নিধনেও সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সিটি করপোরেশনের সাথে কথা বলেছি যেহেতু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সিটি করপোরেশনের মধ্যে। খুব দ্রুতই ফগার মেশিন দিয়ে ক্যাম্পাসে মশক নিধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।