সময়ের জনমাধ্যম

ভুলে যাওয়ার মতো এক হারে সিরিজ খোয়ালো বাংলাদেশ

তামিম ইকবালের অবসরের খবরে ক্রিকেটাঙ্গন উথাল-পাতালের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মাঠে নামে বাংলাদেশ। নিয়মিত অধিনায়কের বদলে মাঠের দ্বায়িত্ব সালনানোর ভার পড়েছিলো লিটন দাসের কাঁধে। এর আগেও জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন লিটন, পেয়েছেন সাফল্যও। তবে আফগানদের বিপক্ষে সিরিজ বাঁচানোর মিশনে ব্যর্থতার কষ্ট নিয়েই মাঠে ছাড়তে হয়েছে লিটনকে। আফগানদের বিপক্ষে ১৪২ রানে হেরে সিরিজ হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। তাতে আফগানদের বিপক্ষে প্রথমবার সিরিজ হারের পাশাপাশি ২০১৪ সালের পর এই প্রথম ঘরের মাঠে একাধিক সিরিজ হারের লজ্জা পেলো টাইগাররা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে টস জিতে আফগানদের ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশ। শুরু থেকেই আফগান ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজের তোপে পড়ে স্বাগতিক বোলাররা। তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন ইব্রাহিম জাদরান। দুই ওপেনারের মারকুটে ব্যাটিংয়ে কোন সুবিধাই করতে পারেনি মুস্তাফিজ-সাকিবরা। সাবর উপর দিয়েই কমবেশি ঝড় বইয়েছেন দুই ব্যাটার।

তাতে নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে বেশ কয়েকটি নজির সৃষ্টি করলো গুরবাজ ও জাদরান। শুধু ওপেনিংয়েই নয়, যে কোন উইকেটে আফগানদের সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড এখন এই দুজনের। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ১৪১ রানের জুটি ছাড়িয়ে সেটিকে ২৫৬ রানে নিয়ে যান দুই ওপেনার। তাতে ওয়ানডেতে প্রথমবার দুইশো ছড়ালো কোন আফগান জুটি। দুজনের এই প্রতিরোধ ভাঙে ইনিংসের ৩৭তম ওভারে। ততক্ষণে ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডে সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন রহমানুল্লাহ গুরবাজ। সাকিবের বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন তিনি। রিভিউ নিলেও বাঁচতে পারেননি। ১৩ চার ও ৭ ছক্কায় ১২৫ বলে খেলেন ১৪৫ রানের ইনিংস।

এরপর দারুণভাবে ঘুরে দাড়ায় বাংলাদেশ। ইনিংসের শেষ ১৪ ওভার থেকে ৮৫ রান দিয়ে তুলে নেয় আরো ৮টি উইকেট। গুরবাজের বিদায়ের পর খুব একটা লড়াই করতে পারেননি আফগান ব্যাটাররা। তা না হলে স্কোর আরো বড় হতো সেটা বলাই যায়। সতীর্থের মতো চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেন ইব্রাহিম জাদরানও। ঠিক তার পরের বলেই মুস্তাফিজের শিকার হয়ে ফেরেন প্যাভিলিয়নে। তার আগে পর বাকিরা ছিলেন যাওয়া আসার মিছিলে। শুধু মোহাম্মাদ নবীই ছিলেন একটু ব্যতিক্রম। নির্ধারিত ওভার শেষে স্কোরবোর্ডে ৯ উইকেটে ৩৩১ রান তোলে আফগানিস্তান।

এর আগে এত রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড নেই বাংলাদেশের। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৩২২ রান করে জিতেছিলো বাংলাদেশ। আর চট্টগ্রামের মাঠে লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ সর্বোচ্চ সাফল্য ২৭৭ রানের। সেসব চাপ নিয়েই জবাব দিতে গিয়ে শুরুতেই লন্ডভন্ড হয়ে যায় স্বাগতিকরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে স্কোরবোর্ডে ৭২ রান তুলতেই নেই ৬ ব্যাটসম্যান। মিরাজকে নিয়ে মুশফিকের ৮৭ রানের জুটিতে লজ্জা কমিয়েছে বাংলাদেশের। ক্যারিয়ারের ২৫০তম ওয়ানডেতে ৬৯ রানের ইনিংস খেলেন মুশফিক। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে তাকে ফিরিয়ে জয় নিশ্চিত করে আফগানিস্তান। পায়ে চোট পাওয়ার ব্যাট করতে পারেননি ইবাদত হোসেন। মুশফিক ছাড়া সর্বোচ্চ ২৫ রান করে এসেছে সাকিব ও মিরাজের ব্যাট থেকে।

তাতে বাংলাদেশের যেমন কপাল পুড়েছে, তেমনি কপাল খুলেছে আফগানিস্তানের। বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথমবার ওয়ানডেতে সিরিজ জিতলো আফগানরা। ৯ বছর পর ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে রাজত্বও পড়লো প্রশ্নের মুখে। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপের আগে আফগানদের বিপক্ষে হার কিছু প্রশ্নের তো জন্ম দিবেই, টিম ম্যানেজমেন্টের কপালের ভাঁজও কি একটু বাড়বে না?