সময়ের জনমাধ্যম

বিশ্বকাপ ট্রফি দখলের মহারণে ভারত-অস্ট্রেলিয়া

আজ ভারতের বিরুদ্ধে জিতে গেলে জিতে গেলে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে ষষ্ঠবারের মতো সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করবে অস্ট্রেলিয়া। তবে ঘরের মাঠে নিশ্চিতভাবেই ছেড়ে কথা বলবেনা এবারের আসরে অপ্রতিরোধ্য ভারত। বিশ্বকাপের এবারের আসরকে নিজেদের তৃতীয় বিশ্বকাপ জয়ের সেরা সুযোগ মনে করছে এই আসরে এখন পর্যন্ত অপরাজিত ভারতীয়রা। রাতে ট্রফি হাতে আনন্দে মাতবে কারা? ভারত, না অস্ট্রেলিয়া, সেই অংকের উত্তর মিলবে ব্যাট-বলের কঠিন লড়াই শেষে।

আহমেদাবাদের নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামে দুদলের লড়াইয়ে প্রথম জয়টা অবশ্য অজি দলপতিরই। টস জিতে আগে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্যাট কামিন্স।

চলতি আসরে টানা ১০ জয়ে অপরাজিত থেকেই ফাইনালে পৌঁছেছে ভারতীয়রা। ঘরের মাঠের ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই দুর্দান্ত করছে রোহিত শর্মার দল। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে গুটিয়ে ফেলতে বোলরারা দেখাচ্ছেন মুন্সিয়ানা, আর ব্যাট হাতে চলছে রীতিমত রান বন্যা। ভারতের সব ব্যাটারই রয়েছেন দুরন্ত ফর্মে, সব মিলিয়ে ২৬৪টি চার এবং ৮৯টি ছক্কা মেরেছেন তারা। ১০ ম্যাচে মোট ২৯২০ রান করেছে রোহিত-কোহলিরা। নিয়মিত পারফর্ম করছেন ওপেনিংয়ে নামা রোহিত ও শুভমন গিল।

এবারের আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ব্যাটার বিরাট কোহলি। ১০ ম্যাচ খেলে তিন সেঞ্চুরি ও চার ফিফটিতে তার সংগ্রহ ৭১১ রান। সেরা পাঁচে রয়েছেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মাও। এক সেঞ্চুরি ও তিন ফিফটিতে ৫৫০ রান করে রয়েছেন পাঁচে। আসরে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে সেঞ্চুরি হয়েছে ৩৯টি, এরমধ্যে ভারতীয় ব্যাটারদের সেঞ্চুরির সংখ্যা ৭টি। সবমিলিয়ে ১৬ ফিফটির দেখা পেয়েছে তারা। চার, পাঁচ বা ছয়ে রান পাচ্ছেন শ্রেয়াস আয়ার, লোকেশ রাহুল, সূর্যকুমার যাদবরা।

বল হাতে আরও দুর্দান্ত ভারতের পেসাররা। ৪ ম্যাচ কম খেলেও অন্যদের ছাড়িয়ে গেছেন ডানহাতি পেসার মোহাম্মদ শামি। ৬ ম্যাচ খেলেই আসরে ৯.১৩ গড়ে সর্বাধিক ২৩ উইকেটের মালিক হয়েছেন তিনি। তিনবার পাঁচ কিংবা তার অধিক উইকেট তুলে নিয়েছেন। সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৫৭ রানে ৭ উইকেট তুলেছেন ৩৩ বর্ষী। দুর্দান্ত করছেন জাসপ্রীত বুমরাহও। ১০ ম্যাচে নিয়েছেন ১৮ উইকেট। কম যাননা বাঁহাতি স্পিনিং অলরাউন্ডার রবীন্দ্র জাদেজাও। ১০ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৬ উইকেট। খুব বেশি ব্যাট করার সুযোগ নেই পেলেও চার ইনিংসে ব্যাট তার সংগ্রহ ১১১ রান।

দল হিসেবে ফর্ম যেমনই থাকুক আইসিসির যে কোনও আসর আসলেই যেন জ্বলে উঠে অজিরা। আইসিসির টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ, ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিসহ সকল ধরণের ট্রফিজয়ী একমাত্র দল অস্ট্রেলিয়া। সবশেষ ২০১৫ সালে ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জেতা দলটি আবারও পৌঁছেছে ফাইনালে। ঘরের মাঠে ভারতকে হারিয়ে হেক্সা জয় করতে বদ্ধপরিকর অজিরা।

আসরে ১০ ম্যাচ খেলে সবমিলিয়ে ২৮৪৬ রান করেছে অজিরা। ব্যাট হাতে দুরন্ত ফর্মে রয়েছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও মিচেল মার্শ। ৫২৮ রান করা ওয়ার্নারের অবস্থান সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকার ছয়ে। চার ও ছক্কা মারার দিক থেকে অন্যসব ব্যাটার থেকে এগিয়ে ওয়ার্নার, মেরেছেন ৪৯টি চার ও ২৪টি ছক্কা। দুই সেঞ্চুরিতে ৪২৬ রান সংগ্রহে নয়ে আছেন ডানহাতি টপঅর্ডার ব্যাটার মার্শ। নিয়মিত অন্য টপ অর্ডার ব্যাটাররাও। ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করতে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে পুরো অস্ট্রেলিয়া।

চলতি আসরে নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর টানা ৭ জয়ে দলকে ফাইনালে তুলতে কম অবদান রাখেননি অস্ট্রেলিয়ার বোলাররাও। দুর্দান্ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন লেগস্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। আসরে এখন পর্যন্ত ১০ ম্যাচ খেলে ২২ উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহকের তালিকায় আছেন দ্বিতীয় অবস্থানে।

এছাড়াও ভালো ফর্মে আছেন পেসার জশ হ্যাজেলউড। ১০ ম্যাচ খেলা এ ডানহাতি ১৪ উইকেট নিয়েছেন। গত দুই আসরের সর্বাধিক উইকেট শিকারী মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সও কম যান না। দুজনে নিয়েছেন সমান ১৩টি করে উইকেট। তবে পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন অজি অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। আসরে দুটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন। চলতি আসরে আফগানদের বিরুদ্ধে করা তার ডাবল সেঞ্চুরী বিশ্বকাপ ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস। এছাড়াও বল হাতে সাড়ে চার ইকনমিতে ৮ ম্যাচে ৫ উইকেট শিকার করেছেন এই অলরাউন্ডার।

৫০ ওভারের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলীয়া। আর স্বাগতিক ভারত শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছে দুবার। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা দুই দলই মরিয়া থাকবে আজকের ফাইনাল জিতে নিজেদের পরিসংখ্যানকে সমৃদ্ধ করে নিতে।