বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বিএনপি সংস্কারবিরোধী- এ ধরনের প্রচারণা একটি মহলের পরিকল্পিত অপপ্রচার। তিনি জানান, বিএনপি সব সময়ই সংস্কারের পক্ষে এবং এ নিয়ে দলের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে।
রোববার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘কিছু মহল ও গণমাধ্যম পরিকল্পিতভাবে বিএনপিকে সংস্কারবিরোধী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। অথচ বিএনপির সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই।’
সংস্কারে বিএনপির অবস্থান
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি ২০১৬ সালের ‘ভিশন ২০৩০’, ২০২০ ও ২০২২ সালের ২৭ দফা এবং অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করে ৩১ দফা সংস্কারের রূপরেখা দিয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে যেসব সংস্কার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেখানেও বিএনপি সহযোগিতা করছে।
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের ২০৮টি সুপারিশের মধ্যে ১৮৭টিতে বিএনপি একমত, ৫টিতে আংশিক একমত এবং ৫টিতে ভিন্নমত জানিয়েছে। অন্য কমিশনগুলোর সুপারিশেও বিএনপি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একমত।
মির্জা ফখরুলের ভাষ্যমতে বিভিন্ন কমিশনের সঙ্গে মতৈক্য
- দুদক সংস্কার কমিশন: ৪৭টির মধ্যে ৪৬টিতে একমত।
- বিচার বিভাগীয় সংস্কার: ৮৯টির মধ্যে ৬২টিতে একমত, ৯টিতে আংশিক একমত, ১৮টিতে ভিন্নমত।
- সংবিধান সংস্কার: ১৩১টি সুপারিশের বেশিরভাগে একমত; ৭০ অনুচ্ছেদ ও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নির্ধারণের প্রস্তাবেও ছাড় দিয়েছে বিএনপি।
- নির্বাচনী ব্যবস্থা: ২৪৩টি সুপারিশের মধ্যে ১৪১টিতে একমত, ১৪টিতে আংশিক একমত, ৬৪টিতে শর্তসাপেক্ষে একমত বা ভিন্নমত। ২৪টি প্রস্তাবে একমত হয়নি।
বিএনপির মতে, জনগণের নির্বাচিত সংসদ ও সরকারের ক্ষমতা খর্ব করে কোনো সংস্কার হলে তা গণতন্ত্রবিরোধী হবে। সেজন্য তারা কিছু সুপারিশের যৌক্তিক বিরোধিতা করেছে। তবে এটাকে বাধা দেওয়া নয়, বরং অর্থবহ সংস্কারের সহযোগিতা হিসেবে দেখছেন তারা।
নির্বাচন প্রসঙ্গে অবস্থান
নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে নয়, নির্বাচনের মাধ্যমেই ক্ষমতায় আসতে চায়। ১৫ বছর ধরে ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্য বিএনপি আন্দোলন করছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নিয়ে মন্তব্য
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে তিনি বলেন, এতে যেমন আগ্রহ ও প্রত্যাশা আছে, তেমনি হতাশা ও দুশ্চিন্তাও আছে। বিএনপি বিভিন্ন বিষয়ে ছাড় দিয়ে কমিশনের সঙ্গে ঐকমত্যের চেষ্টা করেছে। তবে কমিশনের কিছু নতুন প্রস্তাব বা অচলাবস্থা তৈরি করার প্রবণতা সংস্কারপ্রক্রিয়া বিলম্বিত করছে।
অতিরিক্ত কিছু বিষয়ে অবস্থান
- সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতির পদ বিরোধী দলকে দেওয়ার প্রস্তাবে একমত।
- রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন রয়েছে।
- তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনঃপ্রবর্তনসহ বিভিন্ন বিষয়ে বিএনপি সমর্থন জানিয়েছে।
- পুলিশ সংস্কার কমিশন নিয়ে আলোচনা এখনো শেষ হয়নি, তবে সেখানে র্যাব বিলুপ্তিসহ বেশিরভাগ বিষয়ে ঐকমত্য রয়েছে বলে ধারণা দিয়েছেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত ক্ষমতা দেওয়া যেমন ফ্যাসিবাদ সৃষ্টি করে, তেমনি নির্বাচিত সরকার ও সংসদকে ক্ষমতাহীন করলে রাষ্ট্র দুর্বল ও অকার্যকর হয়ে পড়ে।’