সময়ের জনমাধ্যম

ছয় দফা বাংলার মুক্তির সনদ


ডা. শেখ আবদুল্লাহ আল মামুন
যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি

ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ছয় দফার সফল রূপকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। ১৯৬৬ সালের ৫ই ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান লাহোরে বিরোধী দলীয় জাতীয় সম্মেলনে বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে সর্বপ্রথম ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি পেশ করেন। বঙ্গবন্ধু ভেবে চিন্তে ও রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি নিয়ে ছয় দফা প্রণয়ন করেছিলেন। তার এই রাজনৈতিক কর্মসূচি অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ব বাংলার সাধারণ জনগণের মধ্যে মহাজাগরণ সৃষ্টি করে। টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, সর্বত্র এই দাবির প্রতি সমর্থন আদায়ে সভা-সমাবেশ ও জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ মানুষের স্বার্থ ও ভাগ্য পরিবর্তনের উল্লেখ থাকায় ঐতিহাসিক ছয় দফা অতি অল্প সময়ের মধ্যে বাংলার সাধারণ মানুষের মুক্তির সনদে পরিণত হয়।

বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ছয় দফা ভিত্তিক আন্দোলন সারা পূর্ব পাকিস্তানে গড়ে তোলেন। ঐতিহাসিক ছয় দফার আন্দোলন যখন তুঙ্গে, তখন পাকিস্তানি শাসকবর্গ এই প্রস্তাব মেনে না নিয়ে বরং আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী এবং বঙ্গবন্ধুর উপর স্টিম রোলার চালানো শুরু করেন। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বঙ্গবন্ধুকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালানো হয়। ছয় দফা আন্দোলনের তীব্রতার কারণে স্বৈরশাসকরা নিঃশর্তভাবে বঙ্গবন্ধুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। পূর্ব বাংলায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত হয় এবং তিনি জনগণের অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।

৭০’র সামরিক সরকারের আওতায় বঙ্গবন্ধু জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ছয় দফাকে মূল ভিত্তি হিসেবে ধরে নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করেন। তিনি জনগণকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, ছয় দফা বাঙালির মুক্তির পথ দেখাবে, শোষণ বঞ্চনার চির অবসান ঘটাবে। জনগণ এই নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী করে। মূলত ৬ দফা ছিল পূর্ব বাংলার সাধারণ মানুষের বাঁচা-মরার লড়াই। ঐতিহাসিক ছয় দফার মধ্যে আমাদের স্বাধীনতার বীজ রোপিত হয়েছিল।

৭০’র নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। কিন্তু পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ও রাজনীতিবিদরা ষড়যন্ত্র করে বাঙালিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করতে অস্বীকৃতি জানায় ও নানা টালবাহানা শুরু করে। সে সময় বঙ্গবন্ধু পরিস্কার ভাবে জানিয়ে দিলেন, ছয় দফার সাথে কোন আপোস নেই। ছয় দফাভিত্তিক শাসনতন্ত্র প্রণয়ন ও আঞ্চলিত স্বায়ত্ব শাসন দাবি তিনি সামনে নিয়ে আসলে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের সাথে আলোচনা ও সমঝোতার পথ রুদ্ধ হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে ছয় দফার দাবি থেকে সরে এসে তিনি এক দফা দাবি তুলে ধরেন। সেই এক দফা দাবি হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা।

পরে আলোচনা ব্যর্থ হলে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বাংলাদেশের মুক্তি ও স্বাধীনতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর নেতৃত্বে মহান মুক্তিযুদ্ধ স্বার্থকভাবে পরিচালিত হয়েছে। ছয় দফা আমাদের স্বাধীনতার মূল মন্ত্র, অনন্য ইতিহাস রচিত করেছে। সুতরাং বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের ইতিহাসে ঐতিহাসিক ছয় দফার গুরুত্ব, তাৎপর্য অপরিসীম। ৭ই জুন বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় নেতৃবৃন্দের মুক্তির দাবিতে সাধারণ ধর্মঘট চলাকালে পুলিশের গুলিতে টঙ্গী, ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় ও নারায়ণগঞ্জে মনুমিয়াসহ ১১জন শ্রমিক নিহত হন। এই থেকে প্রতি বছর ৭ই জুন ঐতিহাসিক ছয় দফা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।