খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের সাথে একাত্মতা জানিয়ে বুধবার অনশন শুরু করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী। এদিকে কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক জন আহত হন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এরপর ১৪ এপ্রিল রাতে সিন্ডিকেট সভায় সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এরপর ১৫ এপ্রিল শিক্ষার্থীরা উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের এক দফা দাবি জানান। উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে সোমবার বিকেল থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।

বুধবার দুপুর ১২টার দিক ক্যাম্পাসের মহুয়া মঞ্চে অনশন শুরু করেন বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ৮ নেতাকর্মী। অনশনে অংশ নেওয়া আরিফুজ্জামান উজ্জ্বল বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই উপাচার্য তার পদে থাকার নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন। তার আর এক মুহূর্ত ওই পদে থাকার অধিকার নেই। অবিলম্বে তাকে পদত্যাগ করতে হবে।’
তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘এই কুয়েট রিলেটেড ইস্যুতে সারা বাংলাদেশে যদি একজন ছাত্রেরও কিছু হয়, যদি কুয়েটের উপাচার্য পদত্যাগ না করেন, তাহলে আমরা মনে করি ছাত্র উপদেষ্টাদের গদিতে থাকার দরকার নেই। তারা অপারগতা স্বীকার করে পদত্যাগ করুক।’

বুধবারসকাল ১০টার দিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশানিক ভবনের সামনে অনশন শুরু করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। কুয়েট উপাচার্য পদত্যাগ না করা পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
অনশনকারী শিক্ষার্থী সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘কুয়েটের ভাই-বোনদের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আমরা অনশনে বসেছি। গতকাল কুয়েটের উপাচার্য বলেছেন, “অধিকাংশ শিক্ষার্থী তার পদত্যাগ চাচ্ছেন না।” অধিকাংশ শিক্ষার্থী পদত্যাগ চাচ্ছেন কি না, সেটি বুঝাতে আমরা সারাদেশের শিক্ষার্থী সমাজ একযোগে নিজ নিজ ক্যাম্পাসে অনশন কর্মসূচি পালন করছি।’
কুয়েটের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট মশালমিছিল করেছে। মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এ কর্মসূচি পালন করেন নেতাকর্মীরা। এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটের আমতলা চত্বর থেকে মশাল মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ক্যাম্পাসের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলকের সামনে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
আমরণ অনশনে বসেছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তিন নেতা। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা।
অনশনকারীরা হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টেরিমকে বলছি, ভিসি মাছুদ পদত্যাগ না করলে তাকে অপসারণ করেন। যে রক্তের ওপর দিয়ে চেয়ারে বসেছেন, সেই রক্তের সঙ্গে বেইমানি কইরেন না।’

রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরাও কুয়েট উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রুয়েটের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন তারা। পরে গ্রন্থাগারের সামনে সমাবেশ হয়।
রুয়েট শিক্ষার্থী মেহরান আল বান্না ইউশা বলেন, ‘খুলনায় তীব্র দাবদাহের মধ্যে ৩০ ঘণ্টার বেশি অনশন করার পরও ইন্টেরিমের ঘুম ভাঙছে না। কুয়েটের শিক্ষার্থীদের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে ইন্টেরিমের গদিও থাকবে না। কুয়েটের শিক্ষার্থীরা একা নয়, সারাদেশের মানুষ তাদের সঙ্গে আছে। আজকের মধ্যে উপাচার্যের পদত্যাগ করতে হবে।’
শিক্ষার্থী মারুফ বিল্লাহ রিফাত বলেন, ‘গণ–অভ্যুত্থানের মূল চালিকা শক্তি ছাত্রসমাজ। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে ছাত্রদের ওপর বারবার আঘাত করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় কুয়েটে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা হয়েছে। ছাত্রদের হল থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। হামলায় যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে। কুয়েট উপাচার্য চরম দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। তাকে পদত্যাগ করতেই হবে।’