সময়ের জনমাধ্যম

এনবিআর কর্মকর্তাদের শাটডাউন চলছে: দৈনিক ২৫০০ কোটি টাকা ক্ষতির শঙ্কা

টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালন করেছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের ব্যানারে রোববার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে দ্বিতীয় দিনের কর্মসূচি শুরু করেন তারা। সকাল থেকে সারাদেশের এনবিআর কর্মকর্তারা সেখানে জড়ো হতে থাকেন।

তাদের কর্মসূচির ফলে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ও রাজস্ব আদায় ব্যাহত হচ্ছে। তবে, চলমান কর্মসূচি থেকে কেবল আন্তর্জাতিক যাত্রী পরিষেবাকে ছাড় দেওয়া হয়েছে। টানা দ্বিতীয় দিনের মতো বন্ধ রয়েছে দেশের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম, স্থবির হয়ে পড়েছে বন্দরের কনটেইনার ডেলিভারি, মূল্যায়ন ও কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স। ব্যাহত হচ্ছে রাজস্ব আদায় এবং দেশের বাণিজ্যিক প্রবাহ।

চট্টগ্রাম, মোংলা, বেনাপোলসহ দেশের সব বন্দরে কাস্টমস হাউস ও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোগুলোতে শনিবারের মতো আজও কাস্টমস কর্মকর্তারা কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকবেন বলে ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ থেকে জানানো হয়েছে। পরিষদের আহ্বায়করা জানিয়েছেন, সরকারের তরফ থেকে কোনও কার্যকর সাড়া না আসায় ‘মার্চ টু এনবিআর’ ও পূর্ণ শাটডাউন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।

এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, টানা শাটডাউন চলতে থাকলে দেশের রফতানি শিল্প ধসের মুখে পড়বে। বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, ‘কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে প্রতিদিন প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এতে ক্ষুদ্র রফতানিকারকরা দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।’

চট্টগ্রাম বন্দরে ইতোমধ্যেই কনটেইনার জট দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশন (বিকডা) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল (শনিবার) একটিও রফতানি কনটেইনার বন্দরে ঢোকেনি। ইউটিলিটি পারমিশন (ইউপি), রফতানি বিল দাখিল, চালান অনুমোদনসহ সব কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ট্রাকগুলো ডিপোর বাইরে আটকে রয়েছে।

এর আগে চার দিনের কলম-ধর্মঘটের পর শনিবার কর্মকর্তারা করদাতাদের পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি শুরু করেন। তাদেরকে এনবিআর প্রাঙ্গণের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ করতে দেখা গেছে। এসময় তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণের দাবিতে স্লোগান দিচ্ছিলেন।

বিক্ষোভকারীরা জানান, তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ ও ‘প্রতিহিংসামূলক বদলি’ বন্ধের দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। এ সময় ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর সদর দপ্তরের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র‌্যাব ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য উপস্থিতি দেখা গেছে।

সংকটের শুরু যেভাবে:

১২ মে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক অধ্যাদেশে এনবিআর ভেঙে রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নামে দুটি বিভাগ গঠন করে সরকার। এতে দুই বিভাগের প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে ‘সরকার যাকে উপযুক্ত মনে করবে’—এই কথার মারপ্যাঁচে এনবিআর কর্মকর্তাদের দাবি, প্রশাসন ক্যাডারের আধিপত্য কায়েমের পথ উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।

এনবিআর সংস্কার কমিটির সদস্য মো. ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সুপারিশ করেছিলাম—দুই বিভাগের প্রধান হবেন এনবিআর থেকেই। কিন্তু অধ্যাদেশে সে জায়গা থেকে সরে আসা হয়েছে, যা কর্মকর্তাদের ভীষণভাবে হতাশ করেছে।’

টানা শাটডাউনে সরকার যেমন বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি রফতানির বিলম্বে ভেঙে পড়ছে শিল্প ও শ্রমজীবী মানুষের জীবনধারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, আমদানি-রফতানির অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হলে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি, রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ সমস্ত সামষ্টিক অর্থনীতি মারাত্মক চাপে পড়বে।