দীর্ঘদিনের যুদ্ধ আর অবহেলায় জর্জরিত ইরাকের আল-আনবার প্রদেশ। এখানে, প্রচারবিমুখ এক নারী নীরবে তার সম্প্রদায়ের পুনর্গঠনে কাজ করে চলেছেন। তিনি শাথার আল-রাওয়ি।
শাথারের কোন রাজনৈতিক ব্যানার নেই, নেই কোনো বড় কোনো ইশতেহার। বরং প্রচলিত ধারণার বাইরে গিয়ে তিনি স্থানীয় সংস্কৃতি ও প্রয়োজনকে ভিত্তি করে গড়ে তুলছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, উদ্যোগ আর গল্প। তথাকথিত ‘নারী মুক্তি’র পশ্চিমা ধারণা তার কাছে এখানকার সমাজের বাস্তবতার সাথে পুরোপুরি মেলে না।
শাথার নারীদের শুধু ভুক্তভোগী বা বীর হিসেবে দেখেন না, বরং দেখেন বিরূপ পরিস্থিতিতে বেঁচে থাকা মানুষ হিসেবে। তার মতে, সংঘাত মানুষের ভূমিকা নির্দিষ্ট করে না। নারীদের প্রয়োজন প্রতীকী সহানুভূতি নয়, বরং আইনি, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সহায়তার মতো বাস্তবতা। নারীদের নিয়ে গঠিত তার আল-আনবারিয়াহ নেটওয়ার্ক এবং দেশের প্রথম নারী-পরিচালিত লাইব্রেরি তারই প্রমাণ।
শাথার বিশ্বাস করেন, সংস্কৃতি কোনো বিলাসী বিষয় নয়, বরং পুনর্গঠনের মূল ভিত্তি। তার প্রকাশনা সংস্থা ‘দার আল-শাথার’ নারীদের কথা তুলে ধরে। এটি কেবল একটি প্রকাশনা সংস্থা নয়, এটি লেখক ও তাদের কমিউনিটির মধ্যে নতুন সম্পর্ক তৈরি করে।
তার লেখা ‘দ্য থার্ড ওয়াজ মাই এক্সিকিউশন’- বইতে তিনি আইএস দখলকৃত রাওয়াহতে তার কৈশোরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে ধরেছেন। তার লেখায় তিক্ততার সাথে মিশেছে জীবনের কৌতুক। শাখার অন্যের হয়ে কথা বলেন না, বরং মনে করেন প্রতিটি নারীর নিজস্ব গল্প আছে। তিনি মনে করেন, আল-আনবারে একজন নারী হিসেবে টিকে থাকাই বড় প্রতিবাদ।
শাথার আল-রাওয়ি নীরবে কাজ করে চলেছেন, কোনো বাহ্যিক সাহায্য বা রাজনৈতিক আনুগত্য ছাড়াই। তার কাজ আল-আনবারের মানুষের জন্য নতুন আশার আলো জাগিয়েছে। সংস্কৃতিকে শুধু প্রদর্শনীর বস্তু না বানিয়ে, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে তুলতে তার এই প্রচেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।