সময়ের জনমাধ্যম

আরও ছয় দেশে ছড়িয়েছে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ দমনে গণগ্রেপ্তার ও বলপ্রয়োগের পরও যুক্তরাষ্ট্রের সীমানা পেরিয়ে তা ছড়িয়েছে বিশ্বের অন্তত আরও ছয়টি দেশে। খবর-বিবিসির।

যুক্তরাজ্যের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়, ইউসিএল ও ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ করেছেন। তাঁবু গেড়ে আন্দোলন শুরু করেছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কুইবেক ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। দেশটির মন্ট্রিলের কনকর্ডিয়া বিশ্ববিদ্যালয়েও ফিলিস্তিনপন্থীরা বিক্ষোভ শুরু করেছে।

এদিকে, বিক্ষোভ হয়েছে মিসরের আমেরিকান ইউনিভার্সিটি কায়রো ক্যাম্পাসে। এছাড়া ফ্রান্সের সায়েন্সেস পো অ্যান্ড সারবোন ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্যাল স্টাডিজ ক্যাম্পাস এবং ইতালির স্যাপিয়েঞ্জা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও ছড়িয়ে পড়েছে বিক্ষোভ। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।

সপ্তাহ দুয়েক আগে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয়। এরপর থেকে তা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসে অস্থায়ী শিবির বসিয়েছে।

কদিন ধরে চলা এ বিক্ষোভ দমনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত সদস্য। তারা বিক্ষোভে অংশ নেওয়া শতশত শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করেছে। কিছু কিছু ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর শক্তিপ্রয়োগ করেছে পুলিশ সদস্যরা। আবার কোথাও কোথাও সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এর মধ্যেও ক্যাম্পাসগুলোতে তাঁবু খাটিয়ে বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় সমর্থন দেওয়া ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবিও জানিয়েছে তারা।

বিক্ষোভের মধ্যে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে অভিযানে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় বহু বিক্ষোভকারীকেও গ্রেফতার করা হয়েছে।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজায় চলমান যুদ্ধের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসরায়েল সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানি এবং ব্যক্তিকে বর্জনের ডাক দিয়ে চলছে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তাঁবু গেড়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা। এ ঘটনায় সোমবার বিক্ষোভকারীদের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সময় দুপুর ২টার মধ্যে শিবির ছেড়ে না গেলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলেও আলটিমেটাম দেওয়া হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের আলটিমেটামে কাজ না হওয়ায় নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অভিযান চালায়। পুলিশ প্রবেশের পর ২ ঘণ্টার মধ্যে হ্যামিল্টন হল ও ওই তাবু শিবির থেকে সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়। এসময় বহু বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের হাত পিঠমোড়া করে বেঁধে পুলিশের বাসে তুলে নিয়ে যায়।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পুলিশকে ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে তাদের অবস্থান নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছে বলে জানা গেছে। পুলিশ প্রবেশ করার কিছুক্ষণ পর কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি মিনুচে শফিক একটি চিঠি প্রকাশ করে পুলিশকে অন্তত ১৭ মে পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান করার অনুরোধ জানান। স্নাতক ডিগ্রি প্রদান অনুষ্ঠানের দুই দিন পর পর্যন্ত ‘শৃঙ্খলা বজায় রাখা ও শিবির যেন ফের স্থাপন করা না হয়, তা নিশ্চিত করতে’ এই অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।