সাবেক কর্মীদের ১,৮২৩ কোটি টাকা পাওনা পরিশোধ করছেনা ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড


ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের কাছে পাওনা ১,৮২৩ কোটি টাকা পরিশোধের দাবি জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কর্মীদের সংগঠন এক্স ম্যারিকোনিয়ান এসোসিয়েশন। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলন করেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে এক্স ম্যারিকোনিয়ান এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান অভিযোগ করেন, ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশের শ্রম আইন লঙ্ঘন করে সাবেক কর্মীদের পাওনা পরিশোধ না করে গড়িমসি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ১৭ বছরে ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের বিরুদ্ধে প্রাক্তন কর্মীদের ১,৮২৩ কোটি টাকা পাওনার দাবিতে ঢাকার এক নম্বর ও তিন নম্বর শ্রম আদালতে মজুরি মামলা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক ১১৩ জন কর্মী। এরমধ্যে ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত কোম্পানিতে কর্মরত সাবেক কর্মীদের পক্ষে ২০১৪ সালে ১৯ জন বাদী হয়ে ঢাকার শ্রম আদালতে-৩ এ মামলা নং ৬৯১/২০১৪ দায়ের করেন। পরে, ২০২৫ সালের ১২ আগস্ট, আরও ৯৪ জন প্রাক্তন শ্রমিক দ্বিতীয় মামলা দায়ের করেন, যা ঢাকা শ্রম আদালত-১ এ বি.এল.এ নং ৮৬৫/২০২৫ হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছে।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ২৩৪ ধারায় শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন বাধ্যতামূলক হলেও ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড ২০০৬ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত আইন অমান্য করে তহবিল গঠন করেনি। ২০১৪ সাল থেকে তারা তহবিল গঠন শুরু করে। তবে সাবেক ১১৩ জন কর্মীকে তারা এই সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে।
প্রাক্তন কর্মীরা দাবি করছেন, প্রকাশিত অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেডের ৯০% শেয়ারের মালিক, ম্যারিকো লিমিটেড (ইন্ডিয়া) এই সময়ে কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ মুনাফা ইন্ডিয়াতে রেমিট করেছে। শুধু ২০২৪-২৫ অর্থবছরেই ৩৮৪০% ডিভিডেন্ট ঘোষণার মাধ্যমে প্রায় ১০৭৭ কোটি টাকা ইন্ডিয়াতে রেমিট করা হয়েছে, যা ১৭ বছরের মোট রেমিটযোগ্য অর্থের প্রায় ৩৪%। আবারও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম কোয়ার্টারেই ৬০০% ডিভিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে, যা ইন্ডিয়াতে রেমিট যোগ্য।
এ অবস্থায় শ্রমিকদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কিংবা প্রাপ্য পাওনা মজুরি পরিশোধের আগ পর্যন্ত ম্যারিকো বাংলাদেশ লিমিটেড থেকে ইন্ডিয়াতে মুনাফা রেমিট না করার জোর দাবি জানানো হয়। এজন্য গণমাধ্যমকে সোচ্চার থাকার আহ্বান জানান এক্স ম্যারিকোনিয়ান এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দ।
সাবেক কর্মীরা বলেন, দীর্ঘদিন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার পরেও যখন ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হতে হয়, তখন রাষ্ট্রের আইন ও বিচার ব্যবস্থার শরণাপন্ন হওয়া ছাড়া কোন পথ খোলা থাকে না। তারা আরও বলেন, আমরা বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখি এবং বিদ্যমান আইনে সংশ্লিষ্ট আদালত হতে আমাদের ন্যায্য পাওনা আদায়ের জন্য ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করি।
দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর প্রাপ্য সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার পর শ্রমিকরা তাদের দাবির যৌক্তিকতা প্রমাণের জন্য দেশের দুটি স্বনামধন্য চার্টার্ড একাউন্টেন্টস ফার্ম থেকে কোম্পানির প্রকাশিত বাৎসরিক অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে লেবার আইন, ২০০৬ এর ২৩৪ ও ২৪০(৩) ধারা মতে দাবির ১৮২৩ কোটি টাকার সনদ সংগ্রহ করে আদালতে দাখিল করেছেন।