নিখুঁতভাবে মনের ভাষা পড়তে পারবে ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস!


কেবল মনে মনে কথা ভাবলেই তা অনুবাদ করে স্পিকারে রূপান্তর, সম্প্রতি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা এমন এক মাইলফলক প্রযুক্তি উন্মোচন করেছেন। আগে পর্যন্ত ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিসিআই) মূলত তখনই কাজ করত, যখন মানুষ মুখ নাড়ানোর বা কথা বলার চেষ্টা করত। এবার প্রথমবারের মতো শুধু চিন্তাকে ভাষায় রূপান্তরের প্রমাণ পাওয়া গেল।
গবেষণায় অংশ নেন গুরুতরভাবে পক্ষাঘাতগ্রস্ত চারজন মানুষ। তাদের একজন কেবল চোখের নড়াচড়ার মাধ্যমে ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ জানাতে পারতেন। গবেষকরা প্রত্যেকের মস্তিষ্কের স্পিচ মোটর কর্টেক্স -এ সূক্ষ্ম ইলেক্ট্রোড প্রতিস্থাপন করেন। এরপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, যেন মস্তিষ্কের সংকেত থেকে ধ্বনির ক্ষুদ্রতম একক বা ফোনিম শনাক্ত করে তা শব্দ ও বাক্যে রূপান্তর করতে পারে। পরীক্ষায় দেখা গেছে, কেবল মনে মনে বলা শব্দের ক্ষেত্রেও এই প্রযুক্তি প্রায় ৭৪ শতাংশ পর্যন্ত সঠিকভাবে অনুবাদ করতে সক্ষম।
স্ট্যানফোর্ডের স্নায়ুবিজ্ঞানী এরিন কুনজ বলেছেন, ‘কেবল মনের ভেতরের ভাষা থেকে আমরা কীভাবে মস্তিষ্ক কাজ করছে তা বুঝতে পারছি, এটাই প্রথমবার। যাদের কথা বলার ক্ষমতা নেই, তাদের জন্য এটি আরও স্বাভাবিক ও সহজ যোগাযোগের পথ খুলে দিতে পারে।”
তবে এখানে গোপনীয়তার প্রশ্নও সামনে আসছে। গবেষণার সময় দেখা যায়, অংশগ্রহণকারীরা যা ভাবতে বলা হয়নি, সেগুলোও মাঝে মাঝে সিস্টেম শনাক্ত করে ফেলে। এ সমস্যার সমাধানে গবেষকরা বানিয়েছেন এক ধরনের মেন্টাল লক, যেখানে মনের ভেতর বিশেষ পাসওয়ার্ড ভাবলেই ডিকোডার বন্ধ হয়ে যায়। পরীক্ষায় ‘চিটি চিটি ব্যাং ব্যাং’ নামের এই পাসওয়ার্ড ৯৮ শতাংশ ক্ষেত্রে অনিচ্ছাকৃত চিন্তা শনাক্ত ঠেকাতে সক্ষম হয়েছে।
ব্রেন-কম্পিউটার ইন্টারফেস নিয়ে বর্তমানে প্রতিযোগিতা তীব্র হচ্ছে। সম্প্রতি ওপেনএআই প্রধান স্যাম অল্টম্যান ‘মার্জ’ নামে নতুন কোম্পানি চালু করেছেন, যাকে সরাসরি ইলন মাস্কের নিউরালিঙ্কের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দেখা হচ্ছে।
স্ট্যানফোর্ডের সহকারী অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক উইলেট মনে করেন, এ গবেষণা প্রমাণ করছে যে একদিন হয়তো কথা না বলেই শুধু চিন্তার মাধ্যমে সাবলীলভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হবে। তার ভাষায়, ‘এ কাজ ভবিষ্যতে মানুষের স্বাভাবিক কথোপকথনের মতো সহজ ও আরামদায়ক যোগাযোগ সম্ভব করায় বাস্তব আশার ইঙ্গিত দিচ্ছে।’