ভারত মহাসগরে তিন দেশের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার গোপন লড়াই


ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ জলরাশি শুধুই নোনাজল নয়। এটি যেন অদৃশ্য যুদ্ধক্ষেত্র। যেখানে বিশ্ব বাণিজ্যের আধিপত্যের লড়াই চলে যুক্তরাষ্ট্র, চীন ও ভারতের মধ্যে। প্রতি বছর সমুদ্রপথে পরিবহন হওয়া তেলের ৮০ শতাংশের বেশি এই মহাসাগর দিয়ে যায়। ফলে যারাই এখানে আধিপত্য ধরে রাখবে- তাদের হাতেই থাকবে বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহের নাটাই। কারণ মধ্যপ্রাচ্য থেকে পূর্ব এশিয়া, প্রায় সব বড় অর্থনীতিই এই জলপথের ওপর নির্ভরশীল।
দশকের পর দশক যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলের অপ্রতিরোধ্য সামুদ্রিক শক্তি ছিল। ভারত মহাসাগরের মাঝে দিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত শক্তি প্রদর্শন করা যায়। এটি ওয়াশিংটনের সাম্রাজ্যবাদী প্রভাব বলয় তৈরির ক্ষেত্র, আর দেশটির প্রতিদ্বন্দ্বীদের কাছে এটি ‘একচেটিয়া আধিপত্য’।
এই দৌড়ে পিছিয়ে নেই চীন। বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অংশ হিসেবে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা থেকে শুরু করে আফ্রিকার উপকূলে বন্দর তৈরি করছে বেইজিং। বিশ্লেষকেরা যাকে বলেন ‘স্ট্রিং অব পার্লস’ অর্থাৎ একটি সামুদ্রিক বলয়, যা ধীরে ধীরে ভারত মহাসাগরকে ঘিরে ফেলছে। যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটি সরাসরি চ্যালেঞ্জ, আর ভারতের জন্য কৌশলগত দুঃস্বপ্ন।
ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে ভারত মহাসাগরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করেছে ভারত। নতুন যুদ্ধজাহাজ, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে বিমান ঘাঁটি, আর ‘কোয়াড’ এর মতো কৌশলগত জোট, সব মিলিয়ে নয়াদিল্লি নিজেকে এই অঞ্চলের অভিভাবক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।
সবচেয়ে বড় ঝুঁকি রয়েছে সংকীর্ণ প্রণালীগুলোতে যেমন মালাক্কা, হরমুজ বা বাব এল-মান্দেব। এখানে সামান্য অবরোধই বিশ্ব অর্থনীতিকে একদিনেই থমকে দিতে পারে। এই কারণেই প্রতিটি শক্তি নীরবে প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন এক সংঘাতের জন্য, যা তারা প্রকাশ্যে করতে চায় না।
জলবায়ু পরিবর্তনে নতুন পথ খুলছে, জলদস্যুতা আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে, আর প্রযুক্তি বদলে দিচ্ছে জলপথে যুদ্ধের ধরণ। আগামী বছরগুলোতে ভারত মহাসাগর আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠবে। পরবর্তী বৈশ্বিক সংকট হয়তো পৃথিবীর স্থলভাগে শুরু হবে না। বরং শুরু হবে এখানেই।
শেষ পর্যন্ত, এই নতুন শীতল যুদ্ধ শুধু সীমান্তের লড়াই নয়, এটি সমুদ্রপথ দখলের খেলা। আর ভারত মহাসাগরের দখলই নির্ধারণ করবে ২১ শতকের ক্ষমতার ভারসাম্য।