সময়ের জনমাধ্যম

গাজায় একদিনেই নিহত ১৪০ এর অধিক, শিশুরাও রেহাই পায়নি

গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর সাম্প্রতিক হামলায় একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে ছিলেন একাধিক শিশু, যারা তাদের পরিবারের জন্য পানির অপেক্ষায় ছিলেন।

রবিবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজার বিভিন্ন হাসপাতালগুলোতে কমপক্ষে ১৩৯টি মরদেহ পৌঁছেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও অনেক মানুষ আটকে থাকতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার পথে গণহত্যা

চিকিৎসা কর্মকর্তারা জানান, রাফাহ শহরের একটি বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে যাওয়ার পথে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ২৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। উক্ত কেন্দ্রটি পরিচালনা করছে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ), যার পেছনে রয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্য অনুযায়ী, জিএইচএফ-এর কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ৮০০ জনের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন শুধুমাত্র ত্রাণ সংগ্রহের চেষ্টাকালে। এরপর আরও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

পানির লাইনে শিশুদের ওপর বোমা হামলা

মধ্য গাজায় একটি পানি বিতরণ কেন্দ্রে ইসরায়েলি বিমান হামলায় সাত শিশুর মৃত্যু হয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, হামলাটি “কারিগরি ত্রুটির” কারণে লক্ষ্যচ্যুত হয়।

ইউনিসেফ-এর নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ লিখেছেন,

‘আবারও গাজায় সাত শিশুকে হত্যার ভয়াবহ খবর পেলাম। ওরা তখন পানি সংগ্রহের লাইনে ছিল। এর আগেও ত্রাণের লাইনে দাঁড়িয়ে অনেক শিশু ও নারী নিহত হয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন,

‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত নিয়ম-কানুন পর্যালোচনা করা এবং শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন পুরোপুরি মেনে চলা।’

ক্ষুধার কষাঘাতে ধুঁকছে গাজা, পৌঁছাতে পারছে না ত্রাণ

ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় তীব্র খাদ্যসংকট দেখা দিয়েছে। ইউনিসেফ জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ৫,৮০০-এর বেশি শিশু অপুষ্টিতে ভুগছে, যার মধ্যে ১,০০০ জন মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।

ইউএনআরডব্লিউএ (জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা) জানায়,

‘গাজার বাইরে গুদামগুলোতে খাবার ও ওষুধ বোঝাই ট্রাক সারিবদ্ধভাবে অপেক্ষা করছে। অথচ অভ্যন্তরে ক্ষুধায় শিশুদের মৃত্যু হতে বসেছে। অবরোধ তুলে দিন, জাতিসংঘকে তাদের মানবিক দায়িত্ব পালন করতে দিন।’

ক্ষুধাকে যুদ্ধাস্ত্র বানানোর অভিযোগ

সম্প্রতি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক রিপোর্টে ইসরায়েলকে অভিযুক্ত করে বলেছে, তারা ‘ক্ষুধাকে অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করছে এবং এই প্রক্রিয়ায় জিএইচএফ-কে ব্যবহার করে মানবিক সংকট আরও ঘনীভূত করছে।

সংস্থাটির মহাসচিব অ্যাগনেস কালামার্ড বলেন,

‘ইসরায়েল গাজায় অব্যাহত গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কৌশলের অংশ হিসেবে জীবনযাপনের এমন অবস্থা তৈরি করা হয়েছে, যা ক্ষুধা ও রোগের ভয়াবহ এক মিশ্রণ—মানুষদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ঠেলে দিচ্ছে।’

Reendex

Must see news