যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দেখানোয় ৮৬ জন বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ব্রিটিশ সরকারের বিতর্কিত সিদ্ধান্তে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’ নামক এক সরাসরি প্রতিবাদী গোষ্ঠীকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার পর, শনিবার দেশের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এই গ্রেফতার।
যুক্তরাজ্যের সরকার ৪ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে- ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’কে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সংগঠনটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা সম্প্রতি অক্সফোর্ডশায়ারের রাফ ব্রিজ নর্টন বিমানঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি সামরিক বিমানে পেইন্ট করে দেয়। তাদের দাবি, বিমানগুলো গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছে।
নিষেধাজ্ঞার পরদিন থেকেই সমালোচনার ঝড় ওঠে। মানবাধিকার সংগঠন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,, আইনজীবী এবং জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা একে ‘গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক বার্তা’ বলে আখ্যা দেন।
ব্রিটিশ সংগঠন ডিফেন্ড আওয়ার জুরিজ (ডিওজে) এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শনিবার দেশব্যাপী বিক্ষোভের ডাক দেয়। লন্ডনের পাশাপাশি ম্যানচেস্টার, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যান্ডেও একইসঙ্গে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালিত হয়।
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশ এক বিবৃতিতে জানায়, ‘প্রসক্রিপ্টেড (নিষিদ্ধ) সংগঠনের পক্ষে সমর্থন জানানোর দায়ে ৪১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’ বাকিরা গ্রেফতার হয়েছে অন্যান্য শহরে।
ডিওজে জানিয়েছে, ‘নেলসন ম্যান্ডেলা ও মহাত্মা গান্ধীর মূর্তির পাদদেশ থেকেও বিক্ষোভকারীদের টেনে-হিঁচড়ে গ্রেফতা করা হয়েছে। বহু মানুষ শুধু হাতে প্ল্যাকার্ড ধরে রাখার জন্য সন্ত্রাসবাদ আইনে আটক হয়েছেন।’
এই ঘটনায় ব্রিটেনে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। দেশটিতে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর প্রধান নির্বাহীর দায়িত্বে থাকা সাচা দেশমুখ বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন মূলত সহিংসতা মোকাবেলার জন্য তৈরি, প্রতিবাদ দমনের জন্য নয়। এই আইন ব্যবহার করে একটি প্রতিবাদী গোষ্ঠীকে নিষিদ্ধ করা চরম অপব্যবহার।’
এক সপ্তাহ আগেও লন্ডনের পার্লামেন্ট স্কয়ার থেকে ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর সমর্থনে অবস্থান নেওয়া ২৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়, যাদের মধ্যে একজন ৮৩ বছর বয়সী যাজকও ছিলেন।
বিশ্লেষকদের মতে, এই গ্রেফতার এবং নিষেধাজ্ঞা শুধু যুক্তরাজ্যের নীতির কঠোরতা নয়, বরং আন্তর্জাতিকভাবে ফিলিস্তিন সংক্রান্ত অবস্থানের ওপর যুক্তরাজ্যের দৃষ্টিভঙ্গিকেও নতুন করে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে।