সময়ের জনমাধ্যম

বিদেশিদের সম্পত্তি কেনার সুযোগ দিয়ে সৌদি আরবে নতুন আইন

সৌদি আরব বিদেশি নাগরিকদের জন্য রিয়েল এস্টেট মালিকানার অনুমতি দিয়ে নতুন একটি আইন অনুমোদন করেছে। এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি দেশটির অর্থনীতিকে বৈচিত্র্যময় করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণ করার ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। মঙ্গলবার পাস হওয়া এই প্রতীক্ষিত সংস্কার আইনটি সৌদি আরবের অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করছে সৌদি সরকার।

কোথায় এবং কীভাবে এই সুযোগ মিলবে?

নতুন আইন অনুযায়ী, বিদেশিরা এখন রিয়াদ এবং লোহিত সাগর উপকূলের শহর জেদ্দার নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় সম্পত্তি ক্রয় করতে পারবেন। তবে, ইসলামের পবিত্রতম স্থান মক্কা ও মদিনায় সম্পত্তি কেনার ক্ষেত্রে বিশেষ কিছু নিয়ম ও শর্ত প্রযোজ্য হবে।

এই ঘোষণার পরপরই সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট স্টক মার্কেটে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব দেখা গেছে, যা এই সংস্কারের প্রতি বাজারের আস্থাকে প্রতিফলিত করে। সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট জেনারেল অথরিটি খুব শীঘ্রই এই আইনের বিস্তারিত বিধিমালা এবং বাস্তবায়নের পদ্ধতি প্রকাশ করবে। ধারণা করা হচ্ছে, এই আইনটি ২০২৬ সালের জানুয়ারি মাস থেকে কার্যকর হবে।

ভিশন ২০৩০ ও পর্যটন খাতের উপর জোর

সৌদি আরবের সম্পত্তি বাজার বিদেশি বিনিয়োগের জন্য উন্মুক্ত করা দেশটির ভিশন ২০৩০ পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই পরিকল্পনায় পর্যটন খাতকে, বিশেষ করে লোহিত সাগর উপকূলকে, অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর লক্ষ্য হলো, তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে সরে এসে সৌদি আরবকে একটি বৈশ্বিক পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা।

তবে, উচ্চ ব্যয় এবং তেলের দামের ওঠানামার কারণে কিছু মেগা-প্রকল্প অবশ্য বাধার মুখে পড়েছে। নিওম সিটি প্রকল্পের প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস করা তার অন্যতম দৃষ্টান্ত। ২০৩০ সালের মধ্যে যেখানে ১৫ লাখ মানুষের বসবাস করার কথা ছিল, সেখানে এখন ৩ লাখেরও কম বাসিন্দা প্রত্যাশা করা হচ্ছে এবং শহরটির মাত্র ২.৪ কিলোমিটার অংশ সম্পন্ন হবে।

নির্মাণ খাতের তেজিভাব এবং দ্বিমুখী লক্ষ্য

এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও, সৌদি আরবে বর্তমানে একটি বড় ধরনের নির্মাণযজ্ঞ চলছে। ২০২৪ সালে রিয়াদে মুকাব নামক একটি বিশাল কিউব-আকৃতির স্থাপনার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে, যা বিশ্বের বৃহত্তম কাঠামো হতে চলেছে। এই আইকনিক ভবনটি রিয়াদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত নিউ মুরাব্বা নামক বিশাল  উন্নয়ন প্রকল্পের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হবে।

এছাড়াও, লোহিত সাগরের উপকূলে বিলাসবহুল রিসোর্টগুলোর নির্মাণ কাজও দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে। এর মধ্যে কিছু রিসোর্ট, যেমন রিৎজ-কার্লটন রিজার্ভ ইতোমধ্যেই অতিথিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সৌদি আরবের রিয়েল এস্টেট ও পর্যটন খাতের লক্ষ্য দ্বিমুখী। প্রথমত, দেশটির লক্ষ্য হলো মধ্যবিত্ত ও ধনী সৌদি নাগরিকদের বিদেশে অর্থ ব্যয় না করে দেশের অভ্যন্তরে অর্থ ব্যায়ে  উৎসাহিত করা। দ্বিতীয়ত, বিদেশি নাগরিকদের সম্পত্তি কেনার সুযোগ দিয়ে অবকাশকালীন বাড়ি এবং দ্বিতীয় বাসস্থানের জন্য একটি লাভজনক বাজার ধরতে চাইছে, ঠিক যেমনটি সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং কাতারের মতো উপসাগরীয় দেশগুলো সফলভাবে করেছে।

সংযুক্ত আরব আমিরাত বর্তমানে এই বাজারে শীর্ষস্থানীয় অবস্থানে রয়েছে। দুবাই এবং আবু ধাবিতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আবাসিক সম্পত্তির মূল্য উল্লেখযোগ্য হরে বৃদ্ধি পেয়েছে। রিয়েল এস্টেট ফার্ম ফ্র্যাঙ্ক নাইট-এর জুন মাসের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে দুবাইয়ে আবাসিক বাড়ির দাম ১৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবাইয়ের রিয়েল এস্টেটের জন্য উচ্চ-আয়ের সৌদি নাগরিক, যুক্তরাজ্যের নাগরিক এবং পূর্ব এশীয়দের মধ্যে চাহিদা সবচেয়ে বেশি। উল্লেখযোগ্যভাবে, দুবাইয়ে ১ কোটি ডলার বা তার বেশি মূল্যের বাড়ির লেনদেন এখন লন্ডন ও নিউইয়র্ক সিটির সম্মিলিত লেনদেনের সমতুল্য বলে ফ্র্যাঙ্ক নাইট জানিয়েছে।

যদিও পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো সৌদি আরবের সামাজিক সংস্কারের প্রচেষ্টার উপর বেশি আলোকপাত করেছে, গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে দক্ষিণের দেশগুলো, বিশেষ করে উচ্চ-আয়ের মুসলিম ব্যক্তিদের মধ্যেও এই ধরনের সম্পত্তির জন্য সুপ্ত চাহিদা রয়েছে। ফ্র্যাঙ্ক নাইট-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী মুসলিম উত্তরদাতাদের ৭৯ শতাংশ মক্কা বা মদিনায় আবাসিক সম্পত্তি কিনতে আগ্রহী, যার বাজেট ৪ মিলিয়ন ডলারের বেশি।

Reendex

Must see news