শনিবার রাতভর রাশিয়ার ব্যাপক বিমান হামলা ঠেকাতে গিয়ে ইউক্রেনের এক এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের পাইলট নিহত হয়েছেন। এছাড়া রুশ হামলায় কিয়েভজুড়ে ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
রোববার (২৯ জুন) ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই হামলায় শত শত ড্রোন, ক্রুজ ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে রাশিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
যুদ্ধের চতুর্থ বছরে মস্কো এই ধরনের আক্রমণ আরও জোরদার করেছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা মিত্রদের কাছ থেকে ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষা আরও জোরদারে সহায়তা কামনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
এদিকে, নিহত পাইলট ম্যাকসিম উস্তিমেঙ্কোর প্রশংসা করেছেন জেলেনস্কি। তাকে মরণোত্তর ইউক্রেনের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘হিরো অব ইউক্রেন’ উপাধিতে ভূষিত করেছেন ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট।
জেলেনস্কি তার রাতের ভাষণে বলেন, ‘উস্তিমেঙ্কো ২০১৪ সালে রাশিয়ান-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া অভিযানের সময় থেকেই মিশনে ছিলেন। তিনি চার ধরনের বিমান চালানোর দক্ষতা অর্জন করেছিলেন এবং ইউক্রেন রক্ষায় তার গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য ছিল। এ ধরনের মানুষকে হারানো বেদনাদায়ক।’
ইউক্রেনীয় বিমানবাহিনী জানায়, পাইলট একটি জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে ক্ষতিগ্রস্ত বিমানটি উড়িয়ে নিয়ে যান। তবে তার কাছে বেরিয়ে যাওয়ার মতো সময় ছিল না।
টেলিগ্রামে বিমানবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, ‘পাইলট তার সমস্ত অনবোর্ড অস্ত্র ব্যবহার করে সাতটি আকাশ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করেন। শেষ লক্ষ্যবস্তুটি ধ্বংস করার সময় তার বিমানটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিচের দিকে নেমে যেতে থাকে।’
ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ আরও জানায়, কিয়েভে বোমার সাইরেন বেজে ওঠার পর পরিবারগুলো মেট্রো স্টেশনে আশ্রয় নেয়। রাজধানী ও পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে গুলির শব্দ ও বিস্ফোরণ শোনা গেছে, যেখানে সাধারণত এমন হামলা কম ঘটে।
পোল্যান্ডের সীমান্তবর্তী লভিভ অঞ্চলের গভর্নর বলেন, হামলাটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করে চালানো হয়।
গত বছর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান চালানো শুরু করার পর থেকে ইউক্রেন এরইমধ্যে তিনটি বিমান হারিয়েছে। কিয়েভ তার এফ-১৬ বহরের আকার প্রকাশ করেনি।
ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক রোমান স্বিতান জুনের শুরুতে বলেছিলেন, এফ-১৬ ড্রোন প্রতিহত করার কাজে পুরোপুরি উপযোগী নয় বরং এটি উচ্চগতির লক্ষ্যবস্তু মোকাবিলার জন্য বেশি কার্যকর।
ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী জানায়, রাশিয়া মোট ৪৭৭টি ড্রোন ও ৬০টি বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ছুঁড়েছে। এর মধ্যে ইউক্রেনীয় বাহিনী ২১১টি ড্রোন ও ৩৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছে। বাকি ২২৫টি ড্রোন ইলেকট্রনিক যুদ্ধের কারণে বা ভুয়া ড্রোন হওয়ায় বিস্ফোরকবিহীন অবস্থায় হারিয়ে যায়।
এর আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে জেলেনস্কি লেখেন, ‘মস্কো থামবে না, যতক্ষণ না তার এই ধরনের ব্যাপক হামলা চালানোর সামর্থ্য রয়েছে।’
তিনি বলেন, রাশিয়া শুধু গত সপ্তাহেই প্রায় ১১৪টি ক্ষেপণাস্ত্র, এক হাজার ২৭০টি ড্রোন এবং এক হাজার ১০০টি গ্লাইড বোমা ছুঁড়েছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্র-চালিত বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় রুশ-নিয়ন্ত্রিত লুহানস্ক অঞ্চলে একজন নিহত হয়েছে। অথচ ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়ই দাবি করে- তারা বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করে না।