পারমাণবিক শক্তিকে উৎসাহিত করতে শুক্রবার (২৩ মে) চারটি গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই আদেশগুলোর মূল লক্ষ্য হলো, যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে বিদ্যমান জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়াকে সরলীকরণ করা এবং দেশীয় ইউরেনিয়াম খনন ও শোধন কার্যক্রম ব্যাপকভাবে বাড়ানো। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা থেকে মুক্ত করার এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছেন ট্রাম্প।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করছি, যা এই খাতে আমাদেরকে বিশ্বের শীর্ষ শক্তি হিসেবে গড়ে তুলবে।’ তার এই মন্তব্য পারমাণবিক শক্তি নিয়ে তার প্রশাসনের দৃঢ় অঙ্গীকারের ইঙ্গিত দেয়।
দ্রুত অনুমোদন ও দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি:
এই আদেশগুলোর প্রধান উদ্দেশ্য হলো নতুন পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর নির্মাণের গতি ত্বরান্বিত করা, দেশীয় ইউরেনিয়াম উত্তোলন ও পরিশোধন কার্যক্রম জোরদার করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা থেকে বের করে আনা। ট্রাম্প প্রশাসন ছোট আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরিতে জোর দিচ্ছে, যা অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর বিশাল বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হবে।
নতুন আদেশ অনুসারে, পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশন) এখন ১৮ মাসের মধ্যে নতুন রিঅ্যাক্টর অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিতে হবে।হোয়াইট হাউস মনে করছে, সংস্থাটি এতদিন ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপণ করেছে। নিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়ে আশ্বস্ত করে ট্রাম্প বলেন, ‘আমরা কাজ করব দ্রুত ও নিরাপদভাবে। এখন সময় পারমাণবিক শক্তির এবং সেটি আমরা এবার বড় পরিসরে করব।’
ব্যয়বহুল হলেও আগ্রহ বাড়ছে:
এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে যখন ব্যয়বহুল হওয়া সত্বেও যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে ২০১১ সালের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর এখনো বিষয়টি অনেকের কাছে স্পর্শকাতরও বটে। তবে, হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক মাইকেল ক্রাটসিয়োস দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক জাগরণের ঐতিহাসিক সূচনা করেছেন।’
হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রিঅ্যাক্টরগুলো পরীক্ষা ও চালু করা। নতুন আদেশে পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক কমিশনের কাঠামোর আমূল সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে, যা অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করবে এবং সময় কমাবে।
জলবায়ু ও জ্বালানি চাহিদা পারমাণবিক শক্তি:
ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই ‘জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে তেল ও গ্যাস খনন বাড়ানো হয় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু নীতিগুলো বাতিল করা হয়। এখন ট্রাম্প পারমাণবিক শক্তির দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। এর একটি বড় কারণ হলো, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পরিবেশবান্ধব কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ চাইছে এবং পারমাণবিক শক্তির চুক্তি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দু’টি জ্বালানি কোম্পানিও তাদের পুরনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি মাইল আইল্যান্ড, যা ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনাস্থল। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগই আমদানি করে। ট্রাম্পের খনি ও ইউরেনিয়াম শোধন কার্যক্রম বাড়ানোর এটিও একটি বড় কারণ। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে ইউরেনিয়াম আমদানি করেছিল। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং জ্বালানি দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক শক্তির প্রতি আগ্রহ আবারও বাড়তে শুরু করেছে। যদিও ২০১১ সালের জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর অনেক দেশই, বিশেষ করে জার্মানি পারমাণবিক শক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।