গেল মার্চের প্রথম দিন হোয়াইট হাউজে বড় আশা নিয়ে গিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে আতিথেওতার বদলে বাগে পেয়ে চরম ভর্ৎসনা করেন। সে ঘটনা ব্যাপক হাস্যরসের খোরাক জুগিয়েছিল নেটিজেনদের। এবার একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। তবে দৃশ্যপটে জেলেনস্কির জায়গায় সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা।
হোয়াইট ফার্মারদের মেরে ফেলছে দক্ষিণ আফ্রিকার সরকার? হাজার হাজার ক্রস— গণকবরে কি লুকানো আছে তার প্রমাণ? ট্রাম্প বলছেন, `সাউথ আফ্রিকায় চলছে হোয়াইট জেনোসাইড!’
বুধবার হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার মাঝে হাজির এক বিতর্কিত মুহূর্ত। এই বৈঠকে ট্রাম্প হঠাৎ একটি ভিডিও চালিয়ে দেন — যেখানে দেখা যায় অসংখ্য সাদা ক্রস, কথিত ‘হোয়াইট ফার্মারদের কবর’।
ট্রাম্পের দাবি, ‘সাউথ আফ্রিকায় হোয়াইট ফার্মারদের জমি কেড়ে নেওয়া হচ্ছে, আর তাদের হত্যা করা হচ্ছে।’
কিন্তু সাউথ আফ্রিকার কৃষিমন্ত্রী— যিনি নিজেও একজন হোয়াইট আফ্রিকান, তিনি জানালেন, ‘এটি সত্য নয়। এই ভিডিও স্রেফ প্রোপাগান্ডা।’
২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সাউথ আফ্রিকায় ফার্ম মার্ডার হয়েছে ৩০টির মতো। এর মধ্যে মাত্র সাত জন ছিলেন ফার্মার। সাউথ আফ্রিকায় ফার্মের মালিকরা অধিংকাশ শেতাঙ্গ হলেও, ফার্মে কাজ করা অধিকাংশ শ্রমিক কৃষ্ণাঙ্গ।
প্রশ্ন হলো: এগুলো কি কৃষকদের লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হামলা, নাকি সাধারণ অপরাধ প্রবণতার অংশ? অপরাধপ্রবণ এই দেশটিতে সহিংসতা একটি বড় সমস্যা, কিন্তু এর শিকার শুধু সাদা চামড়ার মানুষ নন, বরং বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই কৃষ্ণাঙ্গ।
এই ‘হোয়াইট জেনোসাইড’ কথাটি মূলত ছড়িয়েছে আফ্রি-ফোরাম নামের একটি সংস্থা। এই গ্রুপটিকে সাউথ আফ্রিকার বহু মানুষ এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা শেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী সংগঠন বলে চিহ্নিত করেন।
আফ্রি-ফোরাম এর বক্তব্য হুবহু রিপিট করছেন ট্রাম্প। তাদেরই প্রকাশিত ভিডিও, আর্টিকেল, প্রিন্টআউট —প্রদর্শন করছিলেন ট্রাম্প।
তাহলে, সাউথ আফ্রিকায় কি কোনো সমস্যা নেই? অবশ্যই আছে। সত্য হলো, আজও সাউথ আফ্রিকার অধিকাংশ জমির মালিক শেতাঙ্গ। কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এখনও জমির মালিকানা পায়নি। এই বৈষম্য মেটাতে সরকার ভূমি বন্টনের কথা বলছে। কিন্তু সেটি কোনোভাবে গৃহযুদ্ধ বা গণহত্যা নয়।
‘হোয়াইট জেনোসাইড’ এটি কি সত্য, নাকি নির্দিষ্ট কোন গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অস্ত্র? এই বিতর্ক প্রমাণ করে— তথ্য না জেনে, বিদেশি রাজনীতিকদের প্রোপাগান্ডায় প্রভাবিত হলে, সত্য চাপা পড়ে যায়।
সিরিল রামাফোসা ট্রাম্পকে একথাই বলেন, ‘আমরা নেলসন ম্যান্ডেলার কাছে শিখেছি — আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হয়, সংঘাতের মাধ্যমে নয়।’