যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে ভয়াবহ সতর্কবার্তা দিয়েছে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সিরিয়া ‘সম্ভাব্য ধস ও ব্যাপক গৃহযুদ্ধের’ মুখোমুখি হতে পারে। বুধবার (২১ মে) ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওয়াশিংটন ডিসিতে সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির এক শুনানিতে মার্কো রুবিও বলেন, ‘আমাদের মূল্যায়নে, সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন কর্তৃপক্ষ অচিরেই ভেঙে পড়তে পারে। এতে দেশটি ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে।’ তিনি যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা ও সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে রুবিও বলেন, ‘আমরা যদি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ না করি, তবে সফলতার সম্ভাবনা শুন্য।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিরিয়ার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তের পক্ষে কথা বলেন তিনি। সম্প্রতি সৌদি আরবে সিরিয়ার নেতা আহমেদ আল-শারা’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। শারা একজন সাবেক আল-কায়েদা কমান্ডার, যিনি গত ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের সরকারবিরোধী বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন।
ট্রাম্পের যুক্তি তুলে ধরে রুবিও বলেন, ‘অন্যান্য দেশগুলো সিরিয়াকে সহায়তা করতে চায়, ত্রাণ পাঠাতে চায়, কিন্তু তারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে ভয় পাচ্ছে।’
সাম্প্রতিক সহিংসতা ও উদ্বেগ
শারার নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসন বর্তমানে সুন্নি ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)-এর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এখনো জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাজ্য কর্তৃক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত রয়েছে এইচটিএস।
যদিও শারা সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, বাস্তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সিরিয়ায় গুরুতর সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। মার্চ মাসে পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ৯০০ বেসামরিক মানুষ, যারা মূলত আসাদের সমর্থক আওলাইত সম্প্রদায়ের সদস্য, সরকারপন্থি বাহিনীর হামলায় নিহত হন। মে মাসের শুরুতে দামেস্কের উপশহর ও সুওয়াইদা প্রদেশে দ্রুজ সংখ্যালঘু, নিরাপত্তা বাহিনী ও সুন্নি যোদ্ধাদের মধ্যে সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও সিরিয়ার উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইইউ এর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান কাজা কালাস বলেন, ‘আমরা সিরিয়ার জনগণকে একটি নতুন, সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং শান্তিপূর্ণ সিরিয়া গড়তে সাহায্য করতে চাই।’
সিরিয়ায় ১৩ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে ৬ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাগুলো সিরিয়ার সরকারপন্থি বাহিনীর দ্বারা সংঘটিত মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষিতে আরোপ করা হয়েছিল, যার মধ্যে সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনাও রয়েছে।
ট্রাম্প শারাকে ‘তরুণ, আকর্ষণীয় এবং শক্তিশালী অতীতের যোদ্ধা’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘তার সিরিয়াকে একত্রিত করার সুযোগ রয়েছে।’ শারা এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারকে ‘ঐতিহাসিক এবং সাহসী পদক্ষেপ’ বলে মন্তব্য করেন।