সময়ের জনমাধ্যম

লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারে ক্ষণিকের জন্য সীসা হলো সোনা!

মধ্যযুগের আলকেমিস্টদের সেই পুরনো স্বপ্ন—সীসাকে সোনায় রূপান্তরিত করা। অবশেষে বিজ্ঞানীরা নতুন প্রযুক্তির সহায়তায় স্বল্প সময়ের জন্য হলেও বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। ইউরোপের নিউক্লিয়ার রিসার্চ অর্গানাইজেশন ‘সার্ন’-এর বিজ্ঞানীরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী পার্টিকল এক্সেলারেটর ‘লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার’ (এলএইচসি) ব্যবহার করে এই অভাবনীয় কাজটি সম্পন্ন করেছেন।

তবে বিষয়টি রূপকথার মতো নয়। এখানে সীসাকে সোনায় রূপান্তরিত করতে পরমাণুর চেয়েও ছোট কণাদের অবিশ্বাস্য গতিতে একে অপরের সাথে সংঘর্ষের সৃষ্টি করা হয়েছে। এর ফলে সীসার ভেতরের গঠন পরিবর্তিত হয়েছে এবং তা ক্ষণিকের জন্য সোনার মতো আচরণ করেছে।

লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের প্রযুক্তি বিভিন্ন পারমাণবিক কণাকে ভেঙে নতুন কণা তৈরি করতে সক্ষম। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সাধারণত সীসার আয়নকে একে অপরের সাথে প্রচণ্ড জোরে ধাক্কা খাইয়ে এমন চরম গরম ও ঘন পদার্থ তৈরি করা হয়, যা মহাবিশ্বের সৃষ্টিলগ্নে ‘বিগ ব্যাং’-এর পর তৈরি হয়েছিল বলে তাদের ধারণা।

এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা একটি বিশেষ ঘটনা লক্ষ্য করেছেন। কখনও কখনও সীসার নিউক্লিয়াস সরাসরি ধাক্কা না খেয়ে খুব কাছাকাছি চলে গেলে কিছু নিউট্রন ও প্রোটন হারায়। যেহেতু সোনার তুলনায় সীসার নিউক্লিয়াসে মাত্র তিনটি প্রোটন বেশি থাকে, তাই কিছু প্রোটন হারানোর ফলে সীসা সাময়িকভাবে সোনার পরমাণুতে রূপান্তরিত হয়। তবে এই পরিবর্তন স্থায়ী হয় না, কারণ মুহূর্তের মধ্যেই সেই সোনার পরমাণু ভেঙে আরও ছোট ছোট কণায় পরিণত হয়ে যায়।

পুরনো দিনের আলকেমিস্টরা নিশ্চিতভাবেই এই সাফল্যে বিস্মিত হতেন। তবে ‘সার্ন’ জানিয়েছে, ২০১৫ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে চালানো এই পরীক্ষাগুলোতে তারা মাত্র ২৯ পিকোগ্রাম সোনা তৈরি করতে পেরেছিলেন। বর্তমানে লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের উন্নত সংস্করণ ব্যবহার করে সাম্প্রতিক গবেষণায় আগের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ সোনা তৈরি হলেও, তা এতই সামান্য যে একটি গয়না তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণ পেতে ট্রিলিয়নবার এই পরীক্ষা চালাতে হবে।

‘সার্ন’ আরও স্পষ্ট করেছে যে, সম্পদ অর্জন বা ধনী হওয়ার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সীসা থেকে সোনা হওয়ার এই পারমাণবিক প্রক্রিয়াটি গভীরভাবে বোঝার জন্যই তাদের বিজ্ঞানীরা এই গবেষণা চালাচ্ছেন।

লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডারের ‘এ লার্জ আয়ন কোলাইডার এক্সপেরিমেন্ট’ (এএলআইসিই) প্রকল্পের মুখপাত্র মার্কো ভ্যান লিউউইন এই প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘এটা সত্যিই রোমাঞ্চকর যে, আমাদের বিভিন্ন যন্ত্র একদিকে যেমন হাজার হাজার কণার সংঘর্ষ সামলাতে পারে, তেমনি এমন সূক্ষ্ম কণার সংঘর্ষও শনাক্ত করতে পারে, যেখানে কেবল কয়েকটি কণা তৈরি হয়। আমাদের ইলেকট্রোম্যাগনেটিক ‘পারমাণবিক রূপান্তর’ প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করতে এই প্রযুক্তি সহায়তা করছে।’

Reendex

Must see news