সময়ের জনমাধ্যম

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ট্রাম্পের দূতের

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বোমা ফাটানো মন্তব্য করেছেন। বলেছেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে গাজা যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে। এমন অভিযোগও করেছেন, জিম্মি মুক্তি সংক্রান্ত আলোচনাতেও তেল আবিব বাধা দিচ্ছে।

সোমবার (১২ মে) তুরস্কের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আনাদোলু এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইটকফ গাজায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের হাতে আটক ইসরায়েলি বন্দিদের পরিবারের সঙ্গে বৈঠকে এসব বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। ইসরায়েলের টেলিভিশন চ্যানেল ১২ জানিয়েছে, রোববার (১১ মে) অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উইটকফ ইসরায়েলি সরকারের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করেন।

বৈঠকে উইটকফ স্পষ্ট ভাষায় বলেন, ‘তারা (আমরা) চাই বন্দিরা ফিরে আসুক। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ইসরায়েল এখনো যুদ্ধ থামাতে প্রস্তুত নয়।’ বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র তার এই মন্তব্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর যুদ্ধ পরিচালনা কৌশল নিয়ে সরাসরি প্রশ্ন তুলে উইটকফ আরও বলেন, ‘ইসরায়েল সরকার যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছে, অথচ বাস্তবতা হলো- এই যুদ্ধ থেকে আর কোনো কার্যকর অগ্রগতি আসছে না।’

তবে, এখনো একটি সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে উইটকফ বলেন, এটি ইসরায়েল ও মধ্যস্থতাকারীরা কাজে লাগাবে বলে আশাবাদী তিনি। বলেন, বন্দিদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন তারা। এ জন্য সব পক্ষের ওপর চাপ দিচ্ছেন।’

স্টিভ উইটকফের এই মন্তব্য এমন এক স্পর্শকাতর সময়ে এলো, যখন ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, তারা মার্কিন-ইসরায়েলি দ্বৈত নাগরিক সৈনিক আলেকজান্ডার ইদানকে মুক্তির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা করছে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই আলোচনা যুদ্ধবিরতির নতুন পথ উন্মোচন করতে পারে।

এদিকে, ট্রাম্প প্রশাসনের এই বিশেষ দূতের এমন বিস্ফোরক বক্তব্য সামনে এলো তার আসন্ন সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের ঠিক আগে। মঙ্গলবার (১৩ মে) থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার (১৬ মে) পর্যন্ত চলবে তার এই মধ্যপ্রাচ্য সফর। তবে, এই সফরে ট্রাম্পের ইসরায়েল যাওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানা গেছে।

সাম্প্রতিককালে মার্কিন ও ইসরায়েলি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নেতানিয়াহু এবং ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ট্রাম্প তার নিজস্ব মধ্যপ্রাচ্যনীতি বাস্তবায়নে আরও জোরালোভাবে অগ্রসর হচ্ছেন, যা ইসরায়েলের সঙ্গে তার প্রশাসনের একটি নতুন সংঘাতের জন্ম দিতে পারে।

ইসরায়েলের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এখনো গাজায় ৫৯ জন ইসরায়েলি বন্দি রয়েছেন, যাদের মধ্যে অন্তত ২১ জন জীবিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্যদিকে, ইসরায়েলের কারাগারে প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দি রয়েছেন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, এদের মধ্যে অনেকেই নির্যাতন, অনাহার ও পর্যাপ্ত চিকিৎসার অভাবে ধুঁকছেন, এমনকি অনেকের মৃত্যুও হয়েছে।

এই প্রেক্ষাপটে স্টিভ উইটকফের এই মন্তব্য কেবল গাজা যুদ্ধের গতিপ্রকৃতিই নয়, বরং বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ নিয়েও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকদের অভিমত, এই বক্তব্য ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের কৌশলগত সম্পর্কের ওপর সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে।