চরম দুঃসময়ে মেলেনি বকেয়া সম্মানী: ক্ষোভে বড় পর্দা ছেড়েছেন ডলি জহুর


তিন দশকের বেশি সময় ধরে বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করেছেন বরেণ্য অভিনেত্রী ডলি জহুর। দেড়শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করে তিনি দর্শকদের উপহার দিয়েছেন অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্র। কিন্তু ২০১১ সালে হঠাৎ করেই বড় পর্দা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এই গুণী শিল্পী। কেন এমন সিদ্ধান্ত? সম্প্রতি এই সিদ্ধান্তের কারণ জানালেন ডলি জহুর, আর তার কথায় উঠে এলো দীর্ঘদিনের চাপা ক্ষোভ, কষ্ট এবং বকেয়া সম্মানীর এক করুণ গল্প।
ডলি জহুর জানান, তার স্বামী জহুরুল ইসলামের ক্যানসার ধরা পড়ার পর তিনি ভয়াবহ এক সংকটের মুখে পড়েন। হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। তখনই তিনি সিনেমার প্রযোজক ও পরিচালকদের কাছে তার বকেয়া সম্মানীর প্রায় ৩৪ লাখ টাকা চাইতে শুরু করেন। কিন্তু সেই দুঃসময়ে কেউ তার পাশে দাঁড়াননি। এই অপ্রত্যাশিত অভিজ্ঞতা তাকে গভীরভাবে আঘাত করে।
ডলি জহুর বলেন, ‘’আমার সময় নষ্ট হবে, কাজ করব কিন্তু পয়সা পাব না। আমি তো সবাইকে জোরও করতে পারি না। একজন অভিনয়শিল্পী তো পাওনা আদায়ে জোর করতে পারে না। আমার কোনো সেক্রেটারি ছিল না, আমার স্বামীকেও টাকা তুলে আনতে পাওনাদারের কাছে পাঠাতে পারব না, এ রকম আরকি ব্যাপারটা। যার কারণে যখন আমি দেখলাম, টাকাটা আদায় করতে যেহেতু পারি না, থাক, দরকার নেই, আমিই বরং আর কাজ করব না। আমার টাকায় যদি কেউ বড় হয়ে যায়, হোক বড়। আল্লাহ তাদের কপালে যা রাখছেন, আমার টাকা দিয়ে বড় হওয়ার, হোক। কিন্তু পরে দেখলাম, কেউ বড় হতে পারেনি, সবাই এখন সেই টানাপোড়েনেই আছে, আমার পাওনা যারা দেয়নি, তাদের অবস্থা মোটেও ভালো না। তাদের প্রতি আমার করুণাই হয়, মায়া হয়। কারণ, আমি এখন চাইতে পারব না, কারণ চাইতে গেলেও তাদের কাছে পাব না, তাদের তো আরও খারাপ অবস্থা এখন, তাই না?’
ডলি জহুরের মতে, এই বঞ্চনা ও আর্থিক সংকটের কারণেই তিনি সিনেমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। তার ভাষায়, ‘যখন শুনলাম, আমার স্বামীর ক্যানসার, তা-ও ফোর্থ স্টেজ, তখন তো আমার পায়ের তলায় মাটি নেই। আমার কাঁপুনি আর কে দেখে। তখন আমি কার কাছে টাকা চাইব?’’ তিনি জানান, তিনি কখনো কোনো প্রযোজনা সংস্থার অফিসে গিয়ে টাকা চাননি। এই নীরব অভিমান থেকেই তিনি বড় পর্দাকে ‘গুডবাই’ জানান।
ডলি জহুর আরও জানান, তার কাছে এখনো সব হিসাব আছে. কে কত টাকা দিয়েছেন আর কে দেননি। কিন্তু এখন আর এসব নিয়ে ভাবেন না। কারণ, সেই টাকা ফিরে পাওয়ার আর কোনো আশা নেই।
১৯৭৬ সালে ‘অসাধারণ’ সিনেমার মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় ডলি জহুরের। তার অভিনীত শেষ সিনেমাটি ছিল ‘দুই পৃথিবী’। দীর্ঘ অভিনয় জীবনে ১৬১ চলচ্চিত্রে অভিনয় করে চলচ্চিত্রপ্রেমীদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন। যদিও তিনি আর বড় পর্দায় ফেরেননি, ছোট পর্দায় এখনো সক্রিয় গুণী এই অভিনেত্রী।