উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের মহারণে ইন্টার মিলানের বিরুদ্ধে বার্সেলোনার ৩-৩ গোলের রোমাঞ্চকর ড্রয়ের ম্যাচে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই দেখেছে গোটা বিশ্ব। তবে একজনের উপর ছিল স্পটলাইট। ১৮ বছর পূর্ণ না করা এক কিশোর যেন সব নজর নিজের দিকেই টেনেছেন। তিনি বার্সেলোনার নবীন সেনসেশন লামিন ইয়ামাল।
ম্যাচের ২২ মিনিটের মধ্যেই ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়া বার্সেলোনা যখন দিশেহারা, ঠিক তখনই ত্রাতা হিসেবে আবির্ভূত হন এই তরুণ তুর্কি। ২৪ মিনিটে একক প্রচেষ্টায় এক অসাধারণ গোল করে দলকে ম্যাচে ফেরান ইয়ামাল। এই গোল শুধু বার্সাকে লড়াইয়ে ফেরাল না, একই সাথে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ গোলদাতার আসন দখল করলেন।

এই রেকর্ডের মালিক ছিলেন কিলিয়ান এমবাপ্পে, যিনি ২০১৭ সালে ১৮ বছর ১৪০ দিন বয়সে এই কীর্তি গড়েছিলেন। ইয়ামাল সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন, বয়সের ব্যবধানটা এক বছরের!
ইয়ামালের এই অবিশ্বাস্য গোল দেখে বিশ্ব ফুটবলের তারকারাও নিজেদের মুগ্ধতা প্রকাশ না করে পারেননি। ম্যানচেস্টার সিটির গোলমেশিন আর্লিং হলান্ড ইয়ামালের গোল দেখে স্ন্যাপচ্যাটে লেখেন, *”This guy is incredible.”*

প্রতিপক্ষ শিবিরের অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার আলেসান্দ্রো বাস্তোনিও ইয়ামালের প্রশংসা করতে দ্বিধা করেননি। তিনি বলেন, ‘সে হয়তো এখন বিশ্বের সেরা উইঙ্গার। তাকে আটকাতে আমাদের দু-তিনজন লাগছে!’
শুধু রেকর্ড ভাঙাই নয়, লিওনেল মেসির সাথেও তার ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের পরিসংখ্যান তুলনা করা হচ্ছে। ১৭ বছর বয়সে ইয়ামাল ক্লাব ও দেশের হয়ে ইতোমধ্যেই ১১৯টি ‘সিনিয়র ম্যাচ’ খেলে ফেলেছেন। যেখানে একই বয়সে মেসি খেলেছিলেন মাত্র ৭টি ম্যাচ। ইয়ামালের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত ১৫টি গোল এবং ২৪টি অ্যাসিস্ট।
এই মুহূর্তে ইয়ামালের সামনে আরও এক ইতিহাসের হাতছানি। যদি বার্সেলোনা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ এবং লা লিগা জিততে পারে, তাহলে ইয়ামাল হবেন ইতিহাসের কনিষ্ঠতম ট্রেবল জয়ী ফুটবলার। বার্সা ইতোমধ্যেই কোপা দেল রে জিতেছে, লা লিগায় পয়েন্ট টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে থাকা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের চেয়ে চার পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছে তারা এবং ইন্টার মিলানের বিপক্ষে সেমির প্রথম লেগে ড্রয়ের পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ওঠার সম্ভাবনাও এখনো উজ্জ্বল।

ক্লাব ফুটবলের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ইয়ামাল নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ২০২৩ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সে স্পেনের জাতীয় দলে অভিষেক হওয়ার পর ১৯ ম্যাচে ৪টি গোল করেছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে তার এই ধারাবাহিক পারফরম্যান্স আগামী বিশ্বকাপে স্পেনের জন্য বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
ইয়ামালের প্রতিভা দেখে অনেকেই তাকে ভবিষ্যতের মেসি হিসেবে দেখতে শুরু করেছেন। টকস্পোর্টসের স্কট মিন্টো তো বলেই ফেললেন, ‘লামিন ইয়ামাল এমন খেলোয়াড়দের খারাপ দেখাচ্ছে, যারা নিজেরাই বিশ্বমানের। আমি মেসির কথা বলতে চাই না, কিন্তু ওকে দেখলে মনে পড়ে যায় তাঁকেই!’
এখনও আড়াই মাস বাকি তার ১৮তম জন্মদিন আসতে। এর মধ্যেই লামিন ইয়ামাল যা অর্জন করেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। ইউরোপ এবং বিশ্ব ফুটবলের আলোচনার কেন্দ্রে এখন এই তরুণ তুর্কি। বার্সেলোনার সমর্থকেরা হয়তো আবারও একটি নতুন যুগের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন—পেদ্রি, রদ্রি, ইয়ামালদের সোনালী প্রজন্মের হাত ধরে আরেকটি সাফল্যের যাত্রা শুরু হওয়ার অপেক্ষা।