সময়ের জনমাধ্যম

সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানো বন্ধে আইনি নোটিশ

ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকির মতো জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কুরুচিপূর্ণ এবং পর্নোগ্রাফিক ভিডিও, বিজ্ঞাপন ও প্রচারণার রাশ টেনে ধরতে এবার আইনি পথে হাঁটলেন এক আইনজীবী। বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এই ইস্যুতে সরকারকে একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।

নোটিশে শুধু অশ্লীল কনটেন্ট বন্ধের দাবিই জানানো হয়নি, বরং সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা ছড়ানোর অভিযোগে বিতর্কিত দুই ব্যক্তি ডা. জাহাঙ্গীর কবির এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি’র জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা’র বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও জোর অনুরোধ করা হয়েছে।

আইনজীবী হুমায়ন কবির পল্লব সরকারের কাছে স্পষ্ট ভাষায় দাবি জানিয়েছেন, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, লাইকিসহ যাবতীয় অনলাইন প্ল্যাটফর্মে যতরকমের নোংরা ও আপত্তিকর ভিডিও, বিজ্ঞাপন এবং প্রচারণা চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এর জন্য সংশ্লিষ্ট সকল ওয়েবসাইট, লিংক এবং গেটওয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

অন্যদিকে, জাহাঙ্গীর কবির ও তাসনিম জারা, যারা ইতোপূর্বেও বিভিন্ন বিতর্কিত কাজের জন্য সমালোচিত হয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে অশ্লীলতা প্রসারের অভিযোগ এনে তাদের কর্মকাণ্ডের যথাযথ তদন্ত এবং আইনানুগ শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে নোটিশে।

নেটিজেনরা মনে করেন, অনলাইনে এই ধরনের অশালীন বিষয়বস্তুর অবাধ বিস্তার সমাজে, বিশেষ করে উঠতি বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে খারাপ প্রভাব ফেলছে। তাই সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এর দ্রুত প্রতিকার প্রয়োজন।

অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্রমবর্ধমান অশ্লীলতা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়সহ সরকারের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠন ল’অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন ট্রাস্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী বায়েজিদ হোসেন ও নাঈম সরদারের পক্ষে এই জনস্বার্থের নোটিশটি ডাকযোগে প্রেরণ করা হয়েছে।

নোটিশটি ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, আইনসচিব, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং পুলিশের মহাপরিদর্শকের (আইজিপি) কাছে পাঠানো হয়েছে।

নোটিশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান অনুযায়ী যেকোনো ধরনের অশ্লীল ছবি বা ভিডিও তৈরি, প্রচার ও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে, নোটিশ গ্রহীতাদের নিষ্ক্রিয়তার কারণে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবাধে অশ্লীল ও পর্নোগ্রাফিক ছবি ও ভিডিও প্রচারিত হচ্ছে। এর ফলে ফেসবুক, ইউটিউব এবং অন্যান্য অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকারীদের জন্য অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে।

এই অশ্লীল কনটেন্টের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রভাবে পারিবারিক ও সামাজিক মূল্যবোধ ক্রমশ নষ্ট হচ্ছে বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক শিশু-কিশোর বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীল ভিডিও এবং পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পড়ছে। সহজলভ্য স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের কারণে প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কোমলমতি শিশুরাও এই ক্ষতির শিকার হচ্ছে।

নোটিশে আরও গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে যে, এই সুযোগে বিদেশি কোম্পানিগুলো দেশীয় সিন্ডিকেটের সাথে হাত মিলিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি, বাংলাদেশের অনেক নামিদামি সেলিব্রিটি, মডেল এবং তারকা তাদের নিজস্ব ফেসবুক পেজ ও অ্যাকাউন্টে টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও ও বিজ্ঞাপন প্রচার করছেন। এমনকি কিছু ডাক্তারও নিজেদের ভিউ ও ব্যবসার প্রসারের জন্য অশ্লীল ভিডিও এবং বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করছেন।

বিশেষভাবে ডাক্তার জাহাঙ্গীর কবির ও ডাক্তার তাসনিম জারাসহ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে নোটিশে বলা হয়েছে, তারা বিভিন্ন স্বাস্থ্য পরামর্শের আড়ালে ভিডিও এবং ছবির মাধ্যমে যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করছেন। এই ধরনের ছবি ও ভিডিও সমাজে ব্যাপক অশ্লীলতা ছড়িয়ে সামাজিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের চরম ক্ষতি করছে।

এই বিষয়গুলোকে ‘উদ্বেগজনক’ আখ্যা দিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে নোটিশে। বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেট যেহেতু একটি পাবলিক পরিসর, তাই এখানে অশ্লীল ভিডিও ও পর্নোগ্রাফিক ছবি প্রচার দণ্ডবিধির ২৬৮ ধারা অনুযায়ী ‘গণ উপদ্রপ’। এছাড়াও, ২৯২, ২৯৩ ও ২৯৪ ধারা অনুযায়ী এই ধরনের কনটেন্ট তৈরি, প্রচার ও প্রকাশ দণ্ডনীয় অপরাধ।

সংবিধানের ১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্র জনস্বাস্থ্যের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সাংবিধানিকভাবে দায়বদ্ধ। বিটিআরসি আইনের ২৯ ও ৩০ ধারায় একটি নির্ভরযোগ্য ও নিরাপদ ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও, কর্তৃপক্ষের যথাযথ প্রয়োগের অভাবে ইন্টারনেট অশ্লীলতা ও বেআইনি উপাদানে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

নোটিশের শেষাংশে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা বলা হয়, অবিলম্বে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ল’অ্যান্ড লাইফ ফাউন্ডেশন জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করে আইনি পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে।

Reendex

Must see news