বর্তমানে বাংলাদেশ উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং উল্লেখযোগ্যভাবে কম বেসরকারি বিনিয়োগের সাথে লড়াই করছে। যেহেতু কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বেসরকারি খাত বিনিয়োগের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, তাই দেশটি ধীর গতির কর্মসংস্থান সৃষ্টির সম্মুখীন হচ্ছে।
মুদ্রাস্ফীতি মোকাবেলার প্রচেষ্টায়, বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি নীতি সুদ হার আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশ্বাস করে যে, সুদ হার বৃদ্ধি মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কার্যকর হাতিয়ার নয় এবং এর পরিবর্তে সরবরাহ চেইন প্রক্রিয়া উন্নত করার পক্ষে মত দিয়েছে যা আরও কার্যকর সমাধান।

যদিও এই পদ্ধতি বেসরকারি খাত বিনিয়োগের জন্য একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে পারে, তবে মুদ্রাস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা প্রশ্নবিদ্ধ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক এবং রাশিয়ার অনুরূপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে জানা যায়, কেন এই কৌশলটি বাংলাদেশে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল নাও দিতে পারে।
রাশিয়ার উদাহরণ:
ইউক্রেন যুদ্ধের পরে, রাশিয়া পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হয় এবং সামরিক ব্যয় বৃদ্ধি পায়, যার ফলে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি দেখা দেয়। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক টানা তিন বছর উচ্চ নীতি সুদ হার বজায় রেখে প্রতিক্রিয়া জানায়। এই কৌশলটি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে। রাশিয়ান মুদ্রা স্থিতিশীল হয়েছে, এমনকি শক্তিশালী হয়েছে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী ছিল এবং কর্মসংস্থানের হার উন্নত হয়েছে। তবে, বেসরকারি খাত তহবিলের ঘাটতি অনুভব করেছে, যা এই নীতির কিছু সীমাবদ্ধতা তুলে ধরে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অভিজ্ঞতা:
কোভিড-১৯ মহামারীর সময়, মার্কিন সরকার বিস্তৃত আর্থিক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে, পরিবার এবং ব্যবসাকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে। একই সময়ে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ চেইন বিঘ্নিত হওয়ার কারণে মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায়। সেই সময় অনেক অর্থনীতিবিদ ভেবেছিলেন সরবরাহ ঠিক করাই মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সেরা সমাধান হতে পারে। কিন্তু ফেড সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এর মোকাবিলায়, মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ প্রায় তিন বছর ধরে উচ্চ নীতি হার বজায় রেখেছিল, যা সফলভাবে মুদ্রাস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণযোগ্য পর্যায়ে নিয়ে আসে। এখন মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকায়, ফেড সুদের হার কমানোর কথা বিবেচনা করছে।

তুরস্কের পরীক্ষামূলক পদ্ধতি:
তুরস্কের পরিস্থিতি ছিল অনন্য। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং মুদ্রা অবমূল্যায়নের সম্মুখীন হয়ে, সরকার প্রাথমিকভাবে নীতি হার বাড়ানো এড়িয়ে চলে এবং পরিবর্তে মুদ্রা স্থিতিশীল করার জন্য বিকল্প উপায় নিয়ে পরীক্ষা চালায়। তবে, এই পদক্ষেপগুলো মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে বা মুদ্রা অবমূল্যায়ন রোধ করতে ব্যর্থ হয়। অবশেষে, তুরস্ক নীতি হার বাড়ানোর সর্বজনীন অনুশীলনে ফিরে আসে, কিন্তু বিলম্ব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলোকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা:
বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এই উদাহরণগুলো থেকে খুব আলাদা নয়। সরবরাহ চেইন সমস্যাগুলো সমাধান করা গুরুত্বপূর্ণ হলেও, শুধুমাত্র এই পদ্ধতির উপর নির্ভর করা মুদ্রাস্ফীতি মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট নাও হতে পারে। রাশিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের অভিজ্ঞতা সময়োপযোগী এবং উপযুক্ত আর্থিক নীতি সমন্বয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে, বিশেষ করে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের হাতিয়ার হিসেবে সুদের হারের ব্যবহার।
বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার জন্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত কৌশলগুলো চিনতে এবং গ্রহণ করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশটি টেকসই অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ প্রশস্ত করতে পারে এবং আশার আলো দেখতে পারে।