বেনাপোলে রেলপথে আমদানি এক বছরে কমেছে প্রায় ৩০ হাজার টন


ভারত-বাংলাদেশের প্রধান বাণিজ্যিক প্রবেশদ্বার বেনাপোল স্থলবন্দরে রেলপথে আমদানি আশঙ্কাজনক হারে কমেছে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শুরুতেই গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৯ হাজার মেট্রিক টন কম পণ্য এসেছে এই পথে। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা।
বন্দরসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছর যেখানে রেলপথে আমদানি হয়েছিল ৪১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি পণ্য, সেখানে চলতি অর্থবছরের শুরুতে এসেছে মাত্র ১২ হাজার মেট্রিক টন। ওয়াগনসংখ্যাও কমেছে উল্লেখযোগ্য হারে।
বাণিজ্যিক নেতাদের মতে, ভারতের ধারাবাহিক নিষেধাজ্ঞা এবং রেল অবকাঠামোর দুর্বলতা—এই দুইয়ের সম্মিলিত প্রভাবেই আমদানি ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক আমদানিকারক বাধ্য হয়ে সড়কপথকেই একমাত্র ভরসা হিসেবে নিচ্ছেন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দুই বছর আগে রেলপথে রফতানির অনুমতি দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। নেই নির্দিষ্ট ইয়ার্ড বা পণ্য খালাসের প্রয়োজনীয় অবকাঠামো। ফলে রফতানি এখন কেবল নথিপত্রেই সীমাবদ্ধ।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান বলেন, ‘অবকাঠামো ঠিক না থাকায় রেলে পণ্য খালাস কঠিন হয়ে পড়েছে। এতে করে রফতানিতে রেলকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না, অথচ এটি অনেক কম খরচে পরিবহনের সুযোগ দিত।’
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বর্তমানে ভারত থেকে সুতা, গুঁড়ো দুধ, প্রিন্টিং পেপার, পেপার বোর্ড, মাছ ও তামাকজাত পণ্যের আমদানি বন্ধ রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ থেকে রফতানি বন্ধ রয়েছে পাটজাত পণ্য, তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক সামগ্রী, কাঠের আসবাব ও ফলমূল।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সভাপতি মহসিন মিলন বলেন, ‘এই নিষেধাজ্ঞাগুলো দুই দেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ককে চাপের মধ্যে ফেলছে। স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারিভাবে হস্তক্ষেপ প্রয়োজন।’
বেনাপোল রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার মো. সাইদুজ্জামান জানিয়েছেন, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে পণ্য খালাসের জন্য পৃথক কার্গো ইয়ার্ড তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে। এছাড়া রফতানির বিষয়টি দুই দেশ উচ্চপর্যায়ের আলোচনায় রয়েছে বলেও তিনি জানান।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই দেশের যৌথ উদ্যোগ এবং অবকাঠামো উন্নয়ন ছাড়া সীমান্ত বাণিজ্যে রেলপথের সক্ষমতা কাজে লাগানো সম্ভব নয়। সড়কপথে অতিরিক্ত চাপ এড়াতে হলে রেলপথের কার্যকারিতা বাড়ানো জরুরি।