পারমাণবিক কর্মসূচি থেকে সরে আসবে না ইরান, তবে আলোচনার জন্য প্রস্তুত


সম্প্রতি ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় ব্যাপক ক্ষতি হলেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি ত্যাগ করবে না তেহরান- এমন তথ্য জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি। সোমবার (২১ জুলাই) ফক্স নিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
আরাঘচি বলেন, ‘বর্তমানে আমাদের পারমাণবিক কার্যক্রম স্থবির অবস্থায় রয়েছে, কারণ সাম্প্রতিক হামলায় গুরুতর ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু এটুকু স্পষ্ট করতে চাই—আমরা এই কর্মসূচি ত্যাগ করব না। এটি আমাদের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বড় এক অর্জন এবং একইসাথে জাতীয় গর্বের প্রতীক।’
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে ইরান প্রস্তুত, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে সরাসরি সংলাপ নয়, বরং একটি গঠনমূলক পন্থার কথা ভাবছে তেহরান।
‘আমরা যদি দেখতে পাই যে আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক স্বার্থরক্ষা সম্ভব, তাহলে আমরা সংলাপে যেতে দ্বিধা করব না,’ বলেন ইরানের এই শীর্ষ কূটনীতিক।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইরানের পারমাণবিক প্রকল্প বরাবরই শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে পরিচালিত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও তাই থাকবে। ‘আমরা কখনোই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে যাব না। তবে এর বিনিময়ে আমরা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার চাই।’
সাক্ষাৎকারটি এমন এক সময় প্রচারিত হলো, যখন ইরান-ইসরায়েল সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা এখনও অব্যাহত।
এর আগে ওমানের মধ্যস্থতায় ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পাঁচ দফা আলোচনায় বসা হলেও ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধকরণ মাত্রা নিয়ে মতবিরোধের কারণে তা ব্যর্থ হয়। ওয়াশিংটন ও তেলআবিব দাবি করে, ইরানের সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম এমন পর্যায়ে পৌঁছেছিল, যা খুব সহজেই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পথে নিয়ে যেতে পারত।
তবে তেহরান এ অভিযোগ বারবার নাকচ করে বলেছে, তার প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদন, চিকিৎসা ও গবেষণার মতো শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য।
সাক্ষাৎকারে আরাঘচি আরও জানান, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক হামলায় ইরানের বেশ কিছু পারমাণবিক স্থাপনায় উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং এগুলো এখনও মূল্যায়নের পর্যায়ে রয়েছে।
এছাড়া তিনি বলেন, সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি সুস্থ রয়েছেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানে সামরিক অভিযান চালায়, যার জবাবে দু’দেশ ১২ দিনের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। পরে জুনের শেষ দিকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় দুই পক্ষ। এই সংঘাতের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালায়।
ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি -এর স্বাক্ষরকারী দেশ। বিপরীতে, ইসরায়েল কখনোই এ চুক্তিতে অংশ নেয়নি। জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষণ সংস্থা জানায়, ইরানে অস্ত্র তৈরির জন্য কোনও সক্রিয় কর্মসূচির বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাদের কাছে নেই। তেহরান বারবার আশ্বস্ত করেছে- তা পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং বৈজ্ঞানিক উন্নয়ন ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য নেইতাদের।।