সাইপ্রাস সংকটে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে এরদোয়ান


সাইপ্রাস ইস্যুতে আবারও দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পক্ষে অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। রোববার (২০ জুলাই) সাইপ্রাসে তুরস্কের সামরিক হস্তক্ষেপের ৫১ বছর পূর্তিতে উত্তর সাইপ্রাস সফরে গিয়ে তিনি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দ্বীপটির “বাস্তবতা” মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান।
১৯৭৪ সালে গ্রিসপন্থী সামরিক অভ্যুত্থানের জেরে সাইপ্রাসে সামরিক অভিযান চালায় তুরস্ক। এর পর থেকে দ্বীপটি উত্তর ও দক্ষিণ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে আছে। ১৯৮৩ সালে একতরফাভাবে ‘উত্তর সাইপ্রাস তুর্কি প্রজাতন্ত্র (টিআরএনসি)’ ঘোষণা করা হয়, যেটি আজও কেবল তুরস্কই স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
আন্তর্জাতিক সমাজকে “বাস্তবতা” মেনে নেওয়ার আহ্বান
উত্তর সাইপ্রাসের রাজধানী লেফকোসায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ান বলেন, ‘আমরা দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের দর্শনকে সমর্থন করি। এখন সময় এসেছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার।’
তিনি আরও বলেন, ‘তুর্কি সাইপ্রিয়টদের প্রতি অবিচার ও অবরোধ বন্ধ করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে কূটনৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে টিআরএনসি’র সঙ্গে।’
ভিন্ন দুই আবেগ: দক্ষিণে শোক, উত্তরে উদযাপন
সাইপ্রাসের বিভক্তির ৫১ বছর পূর্তিতে দ্বীপের দুই অংশে দেখা গেছে বিপরীত প্রতিক্রিয়া। দক্ষিণে গ্রিক সাইপ্রিয়টরা এই দিনটিকে শোক হিসেবে পালন করে। রোববার সকালে (স্থানীয় সময়) দ্বীপজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে ১৯৭৪ সালের তুর্কি সেনা অবতরণের স্মরণ করা হয়।
দক্ষিণের প্রেসিডেন্ট নিকোস ক্রিস্টোডুলিদিস নিহতদের স্মরণে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমরা আমাদের ইতিহাস ভুলব না, এবং কোনোভাবেই আমাদের ভূখণ্ড ছাড়ব না।’ তিনি উত্তরের উদযাপনকে “লজ্জাজনক” হিসেবে বর্ণনা করেন।
শান্তি প্রক্রিয়া এখনও অনিশ্চিত
গত কয়েক দশক ধরে সাইপ্রাস পুনরেকত্রীকরণের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। ২০১৭ সালে সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ শান্তি আলোচনা ভেঙে পড়ে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সম্প্রতি সাইপ্রাসের দুই নেতার সঙ্গে নিউইয়র্কে বৈঠকে বসেন, যেটিকে তিনি “গঠনমূলক” বলে উল্লেখ করেছেন। তবে দ্বীপজুড়ে চলাচলের ‘ক্রসিং পয়েন্ট’ ইস্যুতে এখনো মতপার্থক্য রয়ে গেছে।
উত্তর সাইপ্রাসের নেতা আর্শিন তাতার বলেন, ‘তুর্কি হস্তক্ষেপের মাধ্যমেই দ্বীপে শান্তি ফিরে এসেছে। তুর্কি সাইপ্রিয়টদের নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল গ্রিকপন্থীরা।’
দীর্ঘমেয়াদি এই সংকট তুরস্ক ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যকার সম্পর্কেও প্রভাব ফেলছে। সাইপ্রাস ও গ্রিস—উভয়ই ইইউ’র সদস্য এবং এ বিষয়ে তারা কড়া অবস্থান ধরে রেখেছে। আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি না পাওয়ায় টিআরএনসি এখনো কূটনৈতিকভাবে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন।
জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস আস্থার ভিত্তিতে আলোচনা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করেছেন, এই সংকটের স্থায়ী সমাধানের পথে এখনও বহু পথ পাড়ি দিতে হবে।