৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প: সুনামির ঝুঁকিতে ১৪ দেশ ও অঞ্চল


বুধবার (৩০ জুলাই), রাশিয়ার পূর্ব কামচাটকা উপদ্বীপে আঘাত হানা ৮.৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর বিশ্বের অন্তত ১৪টি দেশ ও অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই কম্পনের প্রভাবে ওশেনিয়া অঞ্চলের ৩ দেশ পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ এবং ভানুয়াতুকে সুনামির উচ্চ ঝুঁকির আওতায় রাখা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমসফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এনওএএ) এই সতর্কতা জারি করেছে। ভূমিকম্পটি এতটাই শক্তিশালী যে এর অভিঘাত একাধিক মহাদেশ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাপুয়া নিউ গিনিতে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস দেশটিতে অবস্থানরত মার্কিন নাগরিকদের উদ্দেশে কঠোর সতর্কবার্তা জারি করেছে। তারা বলেছে, ‘যদি কেউ সমুদ্র উপকূলের আশপাশে অবস্থান করেন এবং অস্বাভাবিক ঢেউ, সমুদ্রস্রোত কিংবা দীর্ঘস্থায়ী কম্পন অনুভব করেন, তাহলে দেরি না করে নিরাপদ ও উঁচু স্থানে চলে যান।’
এছাড়াও, দূতাবাসের পরামর্শে বলা হয়েছে: ‘পরবর্তী নির্দেশ না আসা পর্যন্ত বাসিন্দাদের উপকূলবর্তী অঞ্চল, সমুদ্রসৈকত কিংবা নদীতীরে না যেতে অনুরোধ করা হচ্ছে। নিজের ও পরিবারের নিরাপত্তার জন্য সবাইকে আগে থেকেই খাবার, বিশুদ্ধ পানি, ওষুধ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করে রাখতে এবং পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সার্বক্ষণিক সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
এই ভূমিকম্পনের জেরে এখন পর্যন্ত যেসব দেশ ও অঞ্চলে সুনামি সতর্কতা জারি করা হয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে: রাশিয়া, জাপান, তাইওয়ান, ফিলিপাইন, চীন, পাপুয়া নিউ গিনি, সলোমন দ্বীপপুঞ্জ, ভানুয়াতু, হাওয়াই, গুয়াম, ক্যালিফোর্নিয়া, আলাস্কা, ওরেগন, ওয়াশিংটন, ব্রিটিশ কলাম্বিয়া (কানাডা), মেক্সিকো, পেরু, ইকুয়েডর ও নিউজিল্যান্ড।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের ভূকম্পন বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ভূমকম্পনটির কেন্দ্রস্থল ছিল সমুদ্রের গভীরে এবং তা থেকে সৃষ্ট সুনামি প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলজুড়ে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় রিং অব ফায়ার অঞ্চলের দেশগুলো এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভূমিকম্পনের মাত্রা ৮.৮ হলে, সেটি ‘মারাত্মক’ ক্যাটাগরিতে পড়ে এবং এর ফলে ১০ মিটার বা তার বেশি উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হতে পারে, যা উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে সক্ষম।
এমন ভূমিকম্প নতুন নয়, ইতিহাসে এর আগে এমন উচ্চমাত্রার ভূমিকম্পন ও সুনামি একাধিকবার দেখা গেছে। ২০০৪ সালে ইন্দোনেশিয়ায় ৯.১ মাত্রার ভূমিকম্পনের পর সুনামিতে প্রাণ হারিয়েছিল দুই লক্ষাধিক মানুষ। তাই এবারও সতর্কতাকে হালকাভাবে না নিয়ে আগে থেকেই সাবধানতা অবলম্বনের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিএনএন জানিয়েছে, এনওএএ এবং জাপানের আবহাওয়া সংস্থা বাস্তব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করছে এবং প্রয়োজন হলে আরও দেশ ও অঞ্চলে সতর্কতা জারি করা হতে পারে। এছাড়া প্রতিটি দেশের উপকূলরক্ষী বাহিনী ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।