এমপিওভুক্তির প্রতিশ্রুতি দিয়ে শিক্ষক–কর্মচারীদের কাছ থেকে ৮৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে যশোর–৬ (কেশবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন কেশবপুরের শহীদ লে. মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মশিয়ার রহমান।
সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আঞ্জুমান আরা বেগম অভিযোগটি গ্রহণের পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য তিন আসামি হলেন কেশবপুর শহরের সাহাপাড়া এলাকার বাসিন্দা আলমগীর সিদ্দিকী ওরফে টিটো (৪৫), তার স্ত্রী শামিমা পারভীন ওরফে রুমা (৪৫) ও কেশবপুর উপজেলার মাগুরখালি গ্রামের রবিউল ইসলাম (৪৮)। আলমগীর ছিলেন শাহীন চাকলাদারের একান্ত বিশেষ সহকারী। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে শাহীন চাকলাদার ও আলমগীর সিদ্দিকী আত্মগোপনে আছেন।
অভিযোগপত্রে বাদী উল্লেখ করেছেন, শাহীন চাকলাদার সংসদ সদস্য থাকার সময় অন্য আসামিরা একত্র হয়ে নানা ধরনের অপকর্ম করতেন। সে সময় বাদী মাসুদ মেমোরিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ও রেজাকাটি গ্রামের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। সেই সুবাদে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের নানা ধরনের সুবিধা গ্রহণের জন্য আসামিদের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কলেজের স্নাতক ও বিএমটি শাখার এমপিও আদেশ করিয়ে দেওয়া এবং কলেজের কৃষি ডিপ্লোমা শিক্ষকদের এমপিও ছাড় করিয়ে দেওয়ার জন্য আসামিরা ৬৪ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। এছাড়া স্কুলের মাধ্যমিক শাখার এমপিও আদেশ করিয়ে দেওয়ার জন্য আরও ২০ লাখ টাকা দাবি করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদী মশিয়ার রহমান তখন শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে আসামিদের প্রস্তাবে রাজি হন এবং তাদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালের ২ অক্টোবর থেকে ২০২১ সালের ৩০ আগস্টের মধ্যে আলমগীর সিদ্দিকীর বাড়িতে বসে শাহীন চাকলাদারসহ আসামিদের হাতে দফায় দফায় ওই টাকা দেওয়া হয়। এসব টাকা আসামিরা যন্ত্র দিয়ে গুনে গ্রহণ করেন। ২০২১ ও ২০২২ সালের মধ্যে কাজ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন আসামিরা। কিন্তু যথাসময়ে কাজগুলো করে দিতে পারেননি। পরে আসামিদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে নানা ধরনের তালবাহানা শুরু করেন। একপর্যায়ে তারা জানিয়ে দেন, ওই সব কাজ আর হবে না।
এরপর বাদী মন্ত্রণালয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারেন, আসামিরা কোনো কাজ করেননি। সব টাকা ভাগ–বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। কিন্তু মামলা ও হামলার ভয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পাননি বাদী। এর মধ্যে ২০ জুন আলমগীর সিদ্দিকী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে ওই টাকা ফেরত চাইলে তারা জানান, টাকা ফেরত দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসছে, এই বলে নানা ধরনের ভয়ভীতি দেখান। বাধ্য হয়ে বাদী আদালতে এ মামলা করেছেন।