হিরোশিমার ৮০ বছর: মানব ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়ের করুণ স্মৃতি


আজ ৬ আগস্ট। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এক ভয়াবহ কালো দিন। ৮০ বছর আগে আজকের দিনে, ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট, যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ মুহূর্তে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা শুধু একটি শহরকে ধ্বংস করেনি, বরং মানবজাতির ভবিষ্যৎকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছিল।
আজও সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে পুরো জাপান স্তব্ধ হয়ে যায়। ঠিক এই সময়েই ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট ‘লিটল বয়’ নামের পারমাণবিক বোমাটি হিরোশিমার আকাশে বিস্ফোরিত হয়। বোমাটির বিস্ফোরণ ক্ষমতা ছিল ১৫,০০০ টন টিএনটি-র সমান, যা নিমেষে শহরটির প্রায় ৭০ শতাংশ ভবনকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। প্রথম দিনেই মারা যান হাজার হাজার মানুষ। বছরের শেষ নাগাদ মৃতের সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ১,৪০,০০০। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক শিশুও ছিল। এই বর্বর হামলায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন নিরীহ বেসামরিক নাগরিক।
তিন দিন পর, ৯ আগস্ট, নাগাসাকিতে ফেলা হয় আরও শক্তিশালী ‘ফ্যাট ম্যান’ নামের একটি প্লুটোনিয়াম বোমা। এই দুটি হামলা মিলিয়ে মোট প্রায় ২,২৬,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। যারা বেঁচে গিয়েছিলেন, তাদের অনেকেই বিকিরণের প্রভাবে ক্যান্সার, লিউকেমিয়া এবং অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হন, যা তাদের জীবনকে ধীরে ধীরে শেষ করে দেয়।
হিরোশিমা ট্র্যাজেডির ৮০ বছর পেরিয়ে গেলেও, পারমাণবিক অস্ত্রের হুমকি আজও বিশ্বের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ। যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডারের বিস্তার ও আধুনিকায়ন বিশ্ব শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ। হিরোশিমা ও নাগাসাকির ঘটনা বিশ্বকে মনে করিয়ে দেয়, পারমাণবিক যুদ্ধের পরিণতি কতটা ভয়াবহ হতে পারে।
প্রতি বছর হিরোশিমার পিস মেমোরিয়াল পার্কে এই দিনটি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়। লাখো মানুষ সেখানে জড়ো হন নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত এক বিশ্ব গড়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে। এটি কেবল শোক দিবস নয়, বরং মানবতার ওপর চালানো এক নৃশংস আঘাতের বিরুদ্ধে প্রতিবাদেরও দিন।