হাসপাতালের বাইরে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাকে ধরে নিয়ে গেল ইসরায়েলি বাহিনী


গাজার দক্ষিণাঞ্চলে আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) ফিল্ড হাসপাতালের সামনে থেকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ও আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালের পরিচালক ডা. মারওয়ান আল-হামসকে তুলে নিয়ে গেছে ইসরায়েলি বিশেষ বাহিনী।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সোমবার ডা. আল-হামস রাফাহর উত্তরাঞ্চলে রেড ক্রসের একটি হাসপাতালে যাচ্ছিলেন। পথে ছদ্মবেশী ইসরায়েলি সেনারা হঠাৎ গুলি চালায়, যাতে এক সাংবাদিক নিহত হন এবং আরও একজন আহত হন। পরে ডা. আল-হামসকে সেখান থেকে ধরে নিয়ে যায় তারা।
নিহত সাংবাদিকটি তখন ডা. আল-হামসের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়েছে,
‘ডা. মারওয়ান আল-হামস ছিলেন গাজার সংকটময় পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মানবিক কণ্ঠস্বর। তিনি বিশ্বকে জানিয়ে দিচ্ছিলেন ক্ষুধার্ত শিশুদের আর্তনাদ, ওষুধের অভাবে কাতর আহতদের দুর্দশা এবং হাসপাতালের বাইরে অপেক্ষমাণ মায়েদের কান্না। তাঁকে টার্গেট করে অপহরণ করা হয়েছে এই সত্যের কণ্ঠ রোধ করতেই।’
রেড ক্রস জানায়, ঘটনাস্থলে আহতদের চিকিৎসা দিয়েছে এবং হাসপাতালের আশপাশে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছে তারা।
‘ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল’
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছে। সংস্থাটি বলছে, ইসরায়েল গাজার ওপর কঠোর অবরোধ আরোপ করে অন্তত ১০ লাখ শিশুরকে খাদ্য ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত করছে।
বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সহায়তায় পরিচালিত ‘গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)-এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে খাদ্য সংগ্রহ করতে গেলে ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, মে মাসের শেষ দিক থেকে এ পর্যন্ত এই কেন্দ্রগুলোতে খাদ্যের জন্য ভিড় করা প্রায় ৯০০ জন নিহত হয়েছেন।
যুদ্ধবিরতির পর মার্চে ফের ইসরায়েলি হামলা শুরু হলে মানবিক পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। চিকিৎসাসেবায় কাজ করা সংস্থা ‘ডক্টরস উইদাউট বর্ডারস’ জানিয়েছে, তাদের কেন্দ্রগুলোতে রেকর্ডসংখ্যক অপুষ্টি আক্রান্ত শিশু ও গর্ভবতী নারী আসছেন।
চিকিৎসক জোয়ান পেরি বলেন,
‘অপুষ্টির কারণে অনেক শিশু সময়ের আগেই জন্ম নিচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে এক ইনকিউবেটরে ৪–৫ জন নবজাতককে একসঙ্গে রাখতে হচ্ছে। ক্ষত শুকাচ্ছে না, সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে—এটা নিছক সংকট নয়, একটি পূর্ণমাত্রার মানবিক বিপর্যয়।’