লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপলিতে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারের (১৩ মে) এই সংঘাতে আবদেল ঘানি আল-কিকলি নামে এক প্রভাবশালী সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা নিহত হয়েছেন। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত যে, কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিকভাবে শহরের সকল স্কুল বন্ধ ঘোষণা করেছে এবং বাসিন্দাদের ঘরে থাকার কঠোর নির্দেশ জারি করেছে।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ঘেনিওয়া’ নামে পরিচিত স্টেবিলিটি সাপোর্ট অথরিটির (এসএসএ) এই নেতাকে হত্যার পর ত্রিপোলির দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদ্বন্দ্বী সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে তুমুল গোলাগুলি শুরু হয়।
এই পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘ। লিবিয়ায় তাদের সাপোর্ট মিশন (ইউএনএসএমআইএল) অবিলম্বে উত্তেজনা কমানোর আহ্বান জানিয়েছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ভারী অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে সকল পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার রাত ৯টা থেকে ত্রিপোলির বিভিন্ন এলাকা থেকে ভারী গোলাগুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দারা। আল জাজিরার সাংবাদিক মালিক ট্রাইনা জানান, নিরাপত্তা সূত্র আল-কিকলির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে। তিনি আরও জানান, এই সংঘর্ষে অন্তত ছয়জন আহত হয়েছেন, তবে তারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নাকি সাধারণ নাগরিক, তা এখনো স্পষ্ট নয়। আল-কিকলি ছিলেন ত্রিপোলির অন্যতম ক্ষমতাধর সশস্ত্র নেতা এবং সম্প্রতি মিসরাতার প্রতিদ্বন্দ্বী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে তার বিরোধ চলছিল। তার নেতৃত্বাধীন এসএসএ মিলিশিয়া ২০২১ সাল থেকে জাতিসংঘ-স্বীকৃত প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের অধীনে কাজ করছিল।
জাতীয় ঐক্যের সরকারের (জিএনইউ) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বাসিন্দাদের ঘরে থাকার এবং অপ্রয়োজনে চলাচল এড়িয়ে যাওয়ার জন্য জরুরি আহ্বান জানিয়েছে। একইসাথে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় নিরাপত্তার অবনতির কারণে মঙ্গলবার ত্রিপোলির সমস্ত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম স্থগিত করেছে। জিএনইউ’র মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই আবু সালিম এলাকার পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা রয়টার্সকে জানান, তিনি ভারী গোলাগুলির শব্দ শুনেছেন এবং আকাশে লাল আলো দেখেছেন। অন্যান্য বাসিন্দারাও আবু সালিম এবং সালাহ এদ্দিন এলাকায় ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনার কথা জানিয়েছেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে কালো ধোঁয়ার কুন্ডলী, সশস্ত্র ব্যক্তিদের রাস্তায় টহল এবং শহরে সামরিক কনভয়ের প্রবেশ করতে দেখা গেছে। আল জাজিরার সানাদ ফ্যাক্ট-চেকিং এজেন্সি কর্তৃক যাচাইকৃত ফুটেজে মাঝারি ক্যালিবারের অস্ত্রের গুলির শব্দ শোনা গেছে, যা এসএসএ মিলিশিয়ার পরিচিত এলাকাগুলোতেও শোনা যায়। স্থানীয় সূত্র আরও জানায়, আজ-জাওয়িয়া, জিনতান এবং মিসরাতা থেকে আসা কনভয়কে অনেকে রাজধানীতে সম্ভাব্য আরও বড় ধরনের সংঘাতের প্রস্তুতি হিসেবে দেখছেন।
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত বিদ্রোহে লিবিয়ার দীর্ঘদিনের শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত হওয়ার পর থেকে তেল সমৃদ্ধ এই উত্তর আফ্রিকান দেশটি দীর্ঘস্থায়ী বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত রয়েছে। দেশটি কার্যত পূর্ব ও পশ্চিম লিবিয়ার দুটি প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দ্বারা শাসিত হচ্ছে, যাদের প্রত্যেকের নিজস্ব সামরিক বাহিনী এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন রয়েছে।