লন্ডনে ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভ, ৫৫ জন আটক: প্রশ্নের মুখে বাকস্বাধীনতা


যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ থেকে অন্তত ৫৫ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার (২০ জুলাই) ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত হয় এই বিক্ষোভ।
প্রতিবাদকারীরা ‘প্যালেস্টাইন অ্যাকশন’-এর প্রতি সংহতি জানিয়ে ব্যানার-প্ল্যাকার্ড হাতে জড়ো হন। তাদের বার্তা ছিল স্পষ্ট: ‘আমি গণহত্যার বিরোধী, আমি প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে।’
তবে বিক্ষোভ শুরুর পরই মেট্রোপলিটন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটক করে ভ্যানে তুলে নেয়। পুলিশের এমন আচরণ ঘিরে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে বাকস্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকার নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা।
প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় নিষিদ্ধ করা হয় চলতি মাসের ৪ জুলাই। সরকারের দাবি, দলটির সদস্যরা ব্রাইজ নর্টন সামরিক ঘাঁটিতে প্রবেশ করে দুটি বিমান রঙ দিয়ে ঢেকে দেন, যেগুলো নাকি গাজা ও মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছিল।
এরপরই সরকার এই দলকে ‘প্রস্ক্রাইবড অর্গানাইজেশন’ ঘোষণা করে। এখন থেকে সংগঠনটির প্রতি সমর্থন জানানোও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সর্বোচ্চ ১৪ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাজ্যে এটিই প্রথমবারের মতো কোন ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন’ প্রতিবাদী দলকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করা হলো।
বিক্ষোভ শুধু লন্ডনে নয়, হয়েছে স্কটল্যান্ডের এডিনবরো, কর্নওয়ালসহ দেশের আরও কয়েকটি জায়গায়।
অন্যদিকে, লন্ডনের একই এলাকায় প্রো-ইসরায়েল সমর্থকদের পাল্টা সমাবেশও দেখা গিয়েছে। তাদের ব্যানারে লেখা ছিল: ‘গণহত্যা হচ্ছে না’, এবং গাজাবাসীদের ‘মানব ঢাল’ বলে উল্লেখ করে তারা। পুলিশ সেই সমাবেশকে নিরাপত্তা দিয়ে ঘিরে রাখে।
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মানবাধিকারকর্মী ও সংস্থাগুলো। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউকের প্রধান নির্বাহী সাচা দেশমুখ বলেন, ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন কখনোই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারীদের দমন করতে ব্যবহৃত হওয়া উচিত নয়। এটি সরকারের একটি ভয়ানক দৃষ্টান্ত।’
জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরাও জানিয়েছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞা গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। তারা সতর্ক করেছেন, এটি ভবিষ্যতে আরও কঠোর রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণের পথ খুলে দিতে পারে।