প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের পদত্যাগ করবেন না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। শনিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেছেন, “উনি তো চলে যাবেন- বলেননি। উনি বলেছেন যে, ‘আমরা যে কাজ করছি, আমাদের উপরে যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে দায়িত্ব পালনে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়েছে; কিন্তু আমরা সকল প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে আমাদের অর্পিত দায়িত্ব, এটা তো বড় দায়িত্ব, এটার ওপর নির্ভর করছে ভবিষ্যৎ, বহুবছরের ভবিষ্যৎ, এ দায়িত্ব ছেড়ে তো আমরা যেতে পারব না’।”
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “দায়িত্ব পালনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আসছে, সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, কার কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কাজ আমরা এগিয়ে নিতে গেলে কী হচ্ছে, সেগুলো আমরা দেখছি।”
তবে আগামী নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বলেছেন, এ ক্ষেত্রেও যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা কি চিহ্নিত করা হয়েছে, এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “আগামী নির্বাচন ও সুশাসিত গণতন্ত্রিক অবস্থায় উত্তরণে যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার- সেই কাজেও, এটা তো আমাদের প্রধান কাজ; সেই কাজেও কোথা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা আসছে- সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।”
‘অনির্ধারিত বৈঠক’ চলার মধ্যে দুপুর ২টা পাঁচ মিনিটে ‘জরুরি কাজের’ কথা বলে বেরিয়ে যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। সে সময় বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।
গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। জুলাই আন্দোলনের ঐক্য মাস কয়েক বজায় থাকলেও প্রথমে ছাত্রদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। তারপর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের দূরত্ব তৈরি হয়।
ফেব্রুয়ারিতে ছাত্র আন্দোলন ও তাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন দল এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হতে শুরু করে। রাজপথ দখলে নিয়ে টানা বিক্ষোভ দেখিয়ে এনসিপি যে কৌশলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আদায় করে নিয়েছে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই একই কৌশলে মেয়র পদে বসার চেষ্টা করলে এনসিপি সঙ্গে বিরোধ বাড়তে শুরু করে।
ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এনসিপি। কমিশন পুনর্গঠন দাবি করে তারা নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভও করে। সেখানে দলটির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পরিকল্পনা উপদেষ্ট ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্র’ আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন। এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা চলছে।
বৃহস্পতিবার বিএনপি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সরকার, তথ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দিয়েছে দলটি। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের’ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছিল।