মূল্যস্ফীতি কমলেও চালের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা কপালে ভাঁজ ফেলছে


গেল কয়েক মাসে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমেছে। তবে উদ্বেগ বেড়েছে চালের দামের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে। গত জুনে মাঝারি, চিকন ও মোটা তিন ধরনের চালেই মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। গেল এক বছরে বেড়েছে চালের মূল্যস্ফীতি। এমনকি বোরো ধানের ভালো ফলনও চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।
পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের ইকোনমিক আপডেট অ্যান্ড আউটলুক-জুলাই ২০২৫ প্রতিবেদনে এ পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমছে। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর প্রথমবারের মতো গত জুনে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামে, যা স্বস্তিদায়ক বিষয়। মূল্যস্ফীতি কমার মূল কারণ বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্যের দাম কমে যাওয়া, বিশ্ববাজার স্থিতিশীল থাকা, সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি, মিতব্যয়ী চাহিদা ব্যবস্থাপনা এবং ভারসাম্যপূর্ণ বিনিময় হার।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মুদ্রানীতিতে ঘোষিত ৭-৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির যে লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে সেদিকেই অগ্রসর হচ্ছে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি। বাংলাদেশ ব্যাংক গত ছয় মাম ধরে রেপো সুদহার ১০ শতাংশে রেখেছে। নীতি সুদহারসহ আরও কিছু উপাদান বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি কমাতে ভূমিকা রেখেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাজার পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখা জরুরি। গত জুন মাসে খাদ্যে মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের নিচে নেমেছে। কিন্তু খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে চালের অবদান মে মাসের ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে জুনে ৫০ শতাংশে পৌঁছেছে, যা একটি বড় উদ্বেগের কারণ।
জুনে শুধু মাঝারি মানের চালই খাদ্য মূল্যস্ফীতিতে ২৫ শতাংশ অবদান রেখেছে। মোটা চালের অবদান ছিল ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। ইউএসডিএ গ্রিন অ্যান্ড ফিড আপডেট অনুসারে, গত নভেম্বর মাসে মোটা চালের গড় দাম ছিল গত একদশকের মধ্যে সর্বোচ্চ।
সারের দাম, বীজ, শ্রম, সেচসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়া, ফলন-পরবর্তী ক্ষতি, পরিবহন ব্যয় বাড়া, মজুদের প্রবণতা ইত্যাদি চালের বাজারকে প্রভাবিত করে থাকতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বাজারে সরবরাহ ঘাটতি আছে কিনা অথবা সরবরাহ শৃঙ্খলে কোনো বিঘ্ন ঘটেছে কিনা তা আরও গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
অর্থনীতির অন্যান্য দিক প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কিছুটা বেড়েছে। ঘুরে দাঁড়িয়েছে পণ্য রপ্তানি খাতও। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আন্দোলনের কারণে গত জুন মাসে সরকারের রাজস্ব আদায়ে বিঘ্ন ঘটেছে।