মস্কো পৌঁছেছেন উইটকফ: ইউক্রেন সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান সম্ভব?


মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফ ইউক্রেন সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের আশায় মস্কো সফর করেছেন। বুধবার (৬ আগস্ট) তিনি রুশ বিনিয়োগ প্রতিনিধি কিরিল তাকে দিমিত্রিয়েভ উষ্ণ অভ্যর্থনায় তাকে রাশিয়ায় স্বাগত জানান। এই সফরকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
তবে এই উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকের কার্যকারিতা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন রয়েছে। উইটকফের সফরের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হলেও, তিনি ঠিক কার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তা এখনও নিশ্চিত নয়। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেছেন, উইটকফ বুধবার রুশ নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এর আগে ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে আভাস দেওয়া হয়েছিল যে তিনি সম্ভবত প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন।
ট্রাম্প প্রশাসন ইউক্রেন ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান কঠোর করেছে। ট্রাম্প সরাসরি হুমকি দিয়েছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির জন্য পুতিন সম্মত না হলে রাশিয়ার ওপর নতুন দফা নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দিয়েছেন ট্রাম্প। পাশাপাশি, তাদের জ্বালানি তেলের ক্রেতা দেশের ওপরও ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। মস্কোর বৃহত্তম ক্রেতার তালিকায় রয়েছে চীন ও ভারত। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে ট্রাম্প রাশিয়াকে অর্থনৈতিকভাবে চাপের মুখে ফেলতে চাইছেন, একই সঙ্গে তার কৌশলগত মিত্র দেশগুলোকেও সতর্ক করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে দ্রুত কোনো সমাধান আসবে এমন সম্ভাবনা কম। অস্ট্রিয়ার আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক গেরহার্ড ম্যাঙ্গট বলেন, ‘রাশিয়া হয়ত যুদ্ধবিরতির কথা বলবে, কিন্তু সেটি হবে তাদের পুরোনো শর্তের আওতায়, যা গত দুই-তিন বছর ধরে তারা বলে আসছে। ওদিকে, ট্রাম্পও মুখ বাঁচাতে রাশিয়া থেকে তেল, গ্যাস এবং সম্ভবত ইউরেনিয়াম কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করার চাপে থাকবেন তিনি।’ এর থেকে বোঝা যায়, আলোচনায় বসলেও উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থানে অনড়।
পুতিনের ঘনিষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, ট্রাম্পের হুমকির মুখে পুতিন খুব একটা বিচলিত নন। তারা বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার জয়ের ধারা অব্যাহত আছে বলে বিশ্বাস করেন পুতিন। এছাড়া, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে পশ্চিমা চাপ সামলানোর পর নতুন দফা কোনও নিষেধাজ্ঞা তাদের বাড়তি ক্ষতি করবে বলেও তিনি মনে করেন না। তাই, অগ্রগতি চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে তিনি অঙ্গীকারবদ্ধ।’ এর পাশাপাশি, পুতিন ট্রাম্পের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করতে চান না এবং পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের বিষয়ে আশাবাদী। তবে তার কাছে ইউক্রেনে সামরিক লক্ষ্য অর্জনই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাচ্ছে।
স্টিভে উইটকফের মতো একজন অনভিজ্ঞ কূটনীতিকের এই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পাওয়া নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি একজন আবাসন ব্যবসায়ী এবং ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। কূটনৈতিক কোনও অভিজ্ঞতা ছাড়াই চলতি বছরের জানুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দলভুক্ত হন। এর আগে তিনি একাই পুতিন, ইউরি উশাকভ এবং দিমিত্রিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন, যা তার অনভিজ্ঞতারই প্রতিফলন। সমালোচকদের মতে, উইটকফকে অনেকেই “রাশিয়াপন্থী” হিসেবে দেখেন। তিনি এর আগে এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেন দখলের রুশ উদ্দেশ্যকে ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন।
সব মিলিয়ে, উইটকফের মস্কো সফর ইউক্রেন সংকট সমাধানে নতুন প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হলেও, এর সফলতা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।