সময়ের জনমাধ্যম

ভৈরবে ট্রেন দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু, হতাহত শতাধিক ছাড়িয়ে যাবার শঙ্কা

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে দুটি ট্রেনের ভয়াবহ সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ জনে। নিহতদের মধ্যে দুজন নারী ও ১৫ জন পুরুষ রয়েছেন। এ দুর্ঘটনায় আরও অন্তত অর্ধশত আহত হয়েছেন।

সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে ভৈরবের আউটার স্টেশনে একটি মালবাহী ট্রেন আন্তঃনগর এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের পেছনে ধাক্কা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে এগারসিন্দুর এক্সপ্রেসের দুটি বগি যাত্রীসহ উল্টে যায়। দুর্ঘটনার পর থেকে ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম, সিলেট এবং কিশোরগঞ্জের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

দুর্ঘটনাস্থল থেকে এ পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‌‘এখনও উদ্ধারকাজ চলছে। ক্ষতিগ্রস্ত ট্রেনের বগিগুলো উদ্ধারে ঢাকা থেকে উদ্ধারকারী ট্রেন আসছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত অবস্থায় ৫০-৬০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহতদের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, আহতদের চিকিৎসা দিতে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাড়তি প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকদের জরুরি বিভাগে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক।

ভৈরব বাজার ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার মো. রাসেল জানিয়েছেন, এখনও অনেক যাত্রী আটকা পড়ে আছেন দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের বগিতে। হতাহতের সংখ্যা শতাধিক হতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট উদ্ধারকাজ চালাচ্ছে। তাদের সাথে রয়েছেন র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। ঢাকা থেকে বিশেষ উদ্ধারকারী দল ও রিলিফ ট্রেন আসছে। ইতোমধ্যে উদ্ধারকাজে যোগ দিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। তবে উৎসুক জনতার কারণে স্বজনদের ভিড়ে উদ্ধারকাজে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সংশ্লিষ্টদের। উৎসুক জনতাকে মাইকিং করে ঘটনাস্থল থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করা হচ্ছে।

ভৈরব রেলস্টেশনের মাস্টার মো. ইউসুফ বলেন, ‘ঢাকা থেকে কনটেইনারবাহী একটি ট্রেন বিকেলে ভৈরব স্টেশনে প্রবেশ করছিল। তার আগ মুহূর্তে ভৈরব থেকে এগারোসিন্ধুর ট্রেন ঢাকার দিকে রওনা হয়েছিল। জগন্নাথপুর রেলক্রসিং এলাকায় এগারোসিন্ধুর ট্রেনের শেষের দুই-তিনটি বগিতে কনটেইনারবাহী ট্রেনের ইঞ্জিন আঘাত করে। এতে এগারোসিন্ধুর ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়েমুচড়ে যায়। ধারণা করছি, তিনটি বগিতে ১৮০ আসনের বিপরীতে অন্তত ২৫০ জন যাত্রী ছিলেন। এর মধ্যে বেশিরভাগ যাত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন।’

পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল। একই সময়ে ভৈরব থেকে ঢাকায় যাচ্ছিল যাত্রীবাহী ট্রেন এগারোসিন্ধুর। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ তিন বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এতে যাত্রীবাহী ট্রেনের বগিগুলো উল্টে যায়। মালবাহী ট্রেন সিগন্যাল না মানায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, ‘এ পর্যন্ত আহত ৭০ জনকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে।’

এদিকে ভৈরবে গঠিত জরুরি কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু সালেহ (ভৈরব এসি ল্যান্ড অফিসের কর্মকর্তা) জানান, ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় ২ নারী ও ১৫ পুরুষ নিহত হয়েছেন।

ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিক্যাল অফিসার ফারিয়া নাজমুন প্রভা জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় নিহত ১৬ জনের মরদেহ হাসপাতালে আনা হয়েছে।