ভারতে ইসরায়েলের সাথে কর্পোরেট ও রাজনৈতিক যোগসাজশ বন্ধের দাবি


অবিলম্বে ইসরায়েলের সাথে সমস্ত সামরিক সরঞ্জামের লেনদেন বন্ধের দাবি জানিয়েছে ভারতের বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠন। গাজার ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট ও বেসামরিক হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপটে ভারতীয় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরাসরি এই সংঘাতে অর্থায়নকারী হিসেবে আখ্যায়িত করছে তারা।
‘বেঙ্গালুরু ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস’ (বিএফজেপি) সাংসদদের উদ্দেশ্য পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছে, বেঙ্গালুরুর নয়টি কোম্পানি ইসরায়েলের তিনটি শীর্ষস্থানীয় অস্ত্র প্রস্তুতকারক, এলবিট সিস্টেমস, ইসরায়েল এয়ারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ, এবং রাফায়েল অ্যাডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস-কে অস্ত্রাংশ সরবরাহ করছে। এসব যন্ত্রাংশ ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ব্যবহৃত হচ্ছে, যার ফলে ভারতের কর্পোরেট সংস্থাগুলো ইসরায়েলের যুদ্ধ অপরাধে সহযোগী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ফিলিস্তিনি জনগণের নিরাপত্তার জন্য ভারতের পক্ষ থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি করতে সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি। এতে ভারত থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানি এবং গুদামজাত সামগ্রীর পরিবহন স্থগিত রাখা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। তারা বলেছে, এই যুদ্ধ চলাকালীন অস্ত্র সরবরাহ অব্যাহত রাখা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভারতের কর্পোরেট সংস্থাগুলো যদি ইসরায়েলের সামরিক শক্তির জন্য অস্ত্রাংশ সরবরাহ করে, তাহলে তা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং ভারতের নিজস্ব সংবিধানের মুলনীতি লঙ্ঘন।’ এদের অবৈধ কর্মকাণ্ড গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর ইসরায়েলি হামলার জন্য অপরিহার্য সহায়তা প্রদান করছে।
গত কয়েক সপ্তাহে গাজার মানবিক সংকট ও ক্ষুধার্ত শিশুদের মৃত্যুর খবর আসার পর বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের সঙ্গে সামরিক লেনদেন বন্ধ করেছে। এর মধ্যে জার্মানি উল্লেখযোগ্য; গাজা দখলে ইসরায়েলের পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়ায় সামরিক রপ্তানি স্থগিত করেছে ইসরায়েলের মিত্র হিসেবে পরিচিত দেশটি।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর রিসার্চ অন মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনস থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান SASMOS HET Technologies Ltd ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত প্রায় ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অস্ত্রাংশ ইসরায়েলের চারটি প্রধান অস্ত্র প্রস্তুতকারককে সরবরাহ করেছে।
বিএফজেপি চিঠিতে প্রশ্ন তুলেছে, ‘কেন ভারতের মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের আওতায় থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো ইসরায়েলের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত?’ এই উদ্যোগের মাধ্যমে তৈরি যন্ত্রাংশগুলো ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে ব্যবহার হচ্ছে, যা জাতিসংঘের বিভিন্ন মানবাধিকার বিবৃতির পরিপন্থী।
২০২২ সালের পর থেকে ইসরায়েলি সামরিক ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে জোরালো সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এই সহযোগিতার মাধ্যমে ইসরায়েল ভারতে নতুন সামরিক ও প্রযুক্তিগত গবেষণার কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাইছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষ নেওয়া এবং দেশের মধ্যে ফিলিস্তিন সমর্থকদের ওপর দমনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ নিয়ে অসন্তোষের মাঝেও সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। ফিলিস্তিন সমর্থকদের বিক্ষোভ দমন ও গুম-খুনের খবর শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন শহর থেকে।
২০২৪ সালের আগস্টে লেখক অরুন্ধতী রায়সহ কয়েকজন সুশীল নাগরিক ভারত সরকারকে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র, ড্রোন এবং বিস্ফোরক রপ্তানি বন্ধ করে দিতে অনুরোধ করেছেন। অরুন্ধতী রায় বলেছেন, ‘যদি অস্ত্র বিক্রি অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারত গাজার গণহত্যার সঙ্গে চিরতরে যুক্ত থাকবে।’
ইসরায়েলের গাজার ওপর সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত ৬১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যার মধ্যে প্রায় ১৮,৪৩০ শিশু রয়েছে। আহতের সংখ্যা প্রায় ১৫০,০০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার পুরো জনসংখ্যা কঠোর দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভেটোর কারণে গাজার সংকট সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছেনা। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বজুড়ে মানবতাবাদীরা কার্যকর পদক্ষেপের পথ খুঁজছেন। ভারতের সক্রিয় নাগরিকরাও সরকারের কঠোরতা সত্ত্বেও ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য কাজ করে চলেছেন।