বীর মুক্তিযোদ্ধা এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারের জীবনাবসান

মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ, জাতির সূর্য সন্তান এবং সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব:) এ কে খন্দকার, (বীর উত্তম) ইন্তেকাল করেছেন। (ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজিউন)। বার্ধক্যজনিত কারণে শনিবার সকাল ১০ টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। মৃত্যুকালে তিনি এক কন্যা, দুই পুত্রসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, বীর উত্তম ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অটুট নিষ্ঠা, কৌশলগত দক্ষতা এবং অদম্য চেতনা জাতির জন্য অনুপ্রেরণার হিসেবে কাজ করে। মুক্তিবাহিনীর ডেপুটি চিফ অব স্টাফ হিসেবে তিনি মুক্তি যোদ্ধাদের অপারেশনের প্রচেষ্টাগুলোর সমন্বয় সাধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন এবং তাঁর যোগ্যতম পরিচালনায় যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমান বাহিনী পুনর্গঠনে সক্ষম হন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে দেশাত্মবোধ ও সাহসিকতাপূর্ণ অবদানের জন্য এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকারকে ‘বীর উত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। এছাড়াও, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার, বীর উত্তম কে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনায় তাঁর অনন্য সাধারণ ভূমিকা, স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে সুসংগঠিত করা এবং দেশ গঠনে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০১১’ এ ভূষিত করে।
এ কে খন্দকারের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ কে খন্দকার ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক অবিস্মরণীয় সৈনিক। তিনি ছিলেন একজন দৃঢ়চেতা মুক্তিযোদ্ধা, সৎ ও সাহসী এবং আদর্শনিষ্ঠ দেশপ্রেমিক। তাঁর কর্ম, চিন্তা ও আদর্শ নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।
১৯৩০ সালে বাবার কর্মস্থল রংপুরে জন্মগ্রহণ করেন এ কে খন্দকারের। তাঁর আদি নিবাস পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার পুরান ভারেঙ্গা গ্রামে। ১৯৪৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন ও ১৯৪৯ সালে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন তিনি। ১৯৫২ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনীতে কমিশন লাভ করেন। গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে তিনি বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন এবং ডেপুটি চিফ অব স্টাফ নিযুক্ত হন।
মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত আগে তিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর দ্বিতীয় প্রধান। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে মহান মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। ১৯৭১ সালে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি সেনাদের আত্মসমর্পণের ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুক্তিবাহিনীর প্রতিনিধি হিসেবে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি প্রথম বিমানবাহিনী প্রধান নিযুক্ত হন এবং তাঁর নেতৃত্বে যুদ্ধবিধ্বস্ত বিমানবাহিনী পুনর্গঠিত হয়। ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বিমানবাহিনীর প্রধান ছিলেন।
বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য এ কে খন্দকার ১৯৭৩ সালে ‘বীর উত্তম’ খেতাব এবং ২০১১ সালে স্বাধীনতা স্বাধীনতা পদক লাভ করেন। তিনি সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন। এইচ এম এরশাদের সরকারে প্রথম মন্ত্রী হয়েছিলেন এ কে খন্দকার। পরে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য হওয়ার পর পুনরায় মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এ কে খন্দকারের লেখা ‘১৯৭১: ভেতরে বাইরে’ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের আলোচিত একটি গ্রন্থ। আগামীকাল (২১ ডিসেম্বর ২০২৫), রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মরহুমের নামাজে জানাযা এবং গার্ড অব অনার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী ঘাঁটি বাশার প্যারেড গ্রাউন্ডে দুপুর ০১ টা ৪৫ ঘটিকায় অনুষ্ঠিত হবে।

















