সময়ের জনমাধ্যম

বিশ্ববিদ্যালয়ে ছেলেমেয়ে উভয়েই যৌন হয়রানির শিকার: জবি উপাচার্য

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। এমনকি মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সাদেকা হালিম। শনিবার সকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বাস্তবতা ও করণীয়’ বিষয়ক সেমিনারে আমন্ত্রিত অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।

অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, বাংলাদেশে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। জাতীয় মহিলা পরিষদের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৭১৫ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। নির্যাতিত হওয়ার পর ভুক্তভোগীরা সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হয়। মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন তথ্যে উঠে এসেছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রতিনিয়ত বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীরা যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা বলছে, তা নিয়ে তারা কোথাও কোনো অভিযোগ করতে পারছে না।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষকের কাছে অনেক শিক্ষার্থী যৌন হয়রানির শিকার হলেও তারা অভিযোগ করতে পারে না। এই পৃথিবীটা অনেক খারাপ জায়গা, বিশেষ করে মেয়েদের জন্য। আপনজনের থেকেও অনেকসময় মেয়েদের যৌন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে। একটা প্ল্যাটফর্ম নিশ্চিত করতে হবে যেখানে নারীরা তাদের কথা বলতে পারবেন এবং তাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রাবি’র উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, একজন মানুষ যখন তার শুভ চিন্তাগুলো হারিয়ে ফেলে তখন তার মানসিক সমস্যা বা রোগ দেখা দেয়। তখন সে তার যৌক্তিক কারণে বিভিন্ন অপরাধ করে। সমাজ যদি কোনো অপরাধমূলক ঘটনা ঘটে তাহলে ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা হয়। কিন্তু তাকে সচেতন করার যে প্রবণতা তা দেখতে পাই না। প্রকৃত অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসুক তবে তাকে সচেতনতা করার পর। তার পরেও যদি তারা অপরাধ করে তাহলে অপরাধীকে সুষ্ঠুভাবে চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা উচিত। এমনকি সে হতে পারে পুরুষ, নারী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী অথবা কর্মচারীসহ যে কেউ।

নির্যাতিতদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তবে আমরা যেন তা গোপন না করি। কারণ সত্য গোপন করলে এগুলো বিচারহীনতার আওতায় চলে যায়। সকলের দায়িত্ব থাকবে অপরাধিকে শাস্তির আওতায় আনা এবং কীভাবে এ অপরাধ থেকে দূরে থাকবে তাকে সেদিকে পরিচালিত করা।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. তানজিম জোহরা হাবিব বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষক দ্বারা যৌন হয়রানির শিকার হতে পারে আবার তাদের সহপাঠী দ্বারাও হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যৌন হয়রানির ঘটনার তুলনায় অভিযোগ কম আসে। এই বিষয়ে আমাদের বিচার চাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। যার ফলে অনেক ঘটনা আমাদের আড়ালেই থেকে যায়।

রাবিতে যৌন হয়রানি প্রতিরোধের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, যৌন হয়রানি ও প্রতিকার বিষয়ে একটি অভিযোগ বক্স করা হয়েছে যেখানে শিক্ষার্থীরা তাদের নাম পরিচয় ছাড়া অভিযোগপত্র জমা দিতে পারে। আমাদের আবাসিক সকল হলে এ ধরনের সেমিনার আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তাহলে যৌন হয়রানির অপরাধের মাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ইতোমধ্যে সাতটি হলে আয়োজনের পরিকল্পনা করেছি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন নিরোধ’ বিষয় অভিযোগ কমিটি’র আয়োজনে জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক প্রণব কুমার পান্ডে, মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবা কানিজ কেয়াসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা বক্তব্য দেন। সেমিনারে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ দেড় শতাধিক উপস্থিত ছিলেন।