সময়ের জনমাধ্যম

ফোনালাপ ফাঁসের জেরে বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা

ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনার জেরে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রাকে বরখাস্ত করেছে দেশটির সাংবিধানিক আদালত। তবে, নিজের বিরুদ্ধে আসা রায়ে আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্য ১৫ দিন সময় পাবেন পেতংতার্ন। পেতংতার্নের বরখাস্ত হওয়ার পর আপাতত দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী সুরিয়া জুংরুংরুয়াংকিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন।

মঙ্গলবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাবেক কম্বোডিয়ান নেতা হুন সেনের সঙ্গে ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর পেতংতার্নের পদত্যাগের দাবি তীব্র আকার ধারণ করে। পেওংটার্ন ওই ফোনালাপে হুন সেনকে ‘চাচা’ সম্বোধন করেছেন এবং সীমান্ত সংঘর্ষে থাই সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করেন। এ নিয়ে দেশটির জনসাধারণের মনে ক্ষোভের জন্ম নেয়।

ফোনালাপে তাকে বলতে শোনা যায়, তিনি দেশীয় চাপের মুখে রয়েছেন এবং হুন সেনকে বিরোধী পক্ষের কথা না শোনার অনুরোধ করেন। এই কথোপকথনে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনার যদি কিছু চাওয়া থাকে, আমাকে বললেই হবে, আমি দেখবো।’

এমন বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর বিরোধীরা অভিযোগ তোলেন, প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে আপস করেছেন। এ ঘটনার পর থাইল্যান্ডের সরকার সমর্থক জোটের অন্যতম শরিক ভূমজাইথাই পার্টি জোট ত্যাগ করে। এর ফলে পেতংতার্নের নেতৃত্বাধীন ফেউ থাই পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠতা ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়াও পাশাপাশি, তার জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে কমেছে। বর্তমানে তিনি পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।

কম্বোডিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ফোনালাপ ফাঁসের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে সাংবিধানিক আদালতে একটি পিটিশন দায়ের করা হয়। আদালত তা গ্রহণ করে এবং মামলার রায় না হওয়া পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার কার্যক্রম স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। সাংবিধানিক আদালত ৭-২ ভোটে পেতংতার্নকে সাময়িক বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়।

ফোনালাপ ফাঁসের পর পেতংতার্ন এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, তিনি কূটনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে বক্তব্য রেখেছেন এবং এতে কোনো আনুগত্য প্রকাশ করা হয়নি। পাশাপাশি তিনি দাবি করে বলেন, এটি একটি ব্যক্তিগত আলাপ ছিল যা কখনোই জনসম্মুখে আসা উচিত ছিল না।

থাইল্যান্ডের ক্ষমতাধর রাজনৈতিক পরিবার সিনাওয়াত্রা বংশের সদস্য পেতংতার্ন। তার বাবা থাকসিন সিনাওয়াত্রা ও ফুফু ইংলাক সিনাওয়াত্রাও দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা থাইল্যান্ডের সর্বকনিষ্ঠ এবং ইংলাকের পর দ্বিতীয় নারী প্রধানমন্ত্রী। চূড়ান্তভাবে বরখাস্ত হলে তিনি হবেন ক্ষমতাধর সিনাওয়াত্রা পরিবারের তৃতীয় সদস্য, যিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ক্ষমতাচ্যুত হবেন।

মাত্র ১০ মাস আগে ক্ষমতায় আসেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার মেয়ে ৩৮ বছর বয়সী পেতংতার্ন। গত বছর পেতংতার্নের পূর্বসূরি স্রেত্তা থাভাইসিন বরখাস্ত হন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি তার মন্ত্রিসভায় কারাভোগ করা এক সাবেক আইনজীবীকে নিয়োগ দিয়েছিলেন। স্রেত্তা বরখাস্ত হওয়ার কয়েক দিন পরই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন পেতংতার্ন।

এক বছরেরও কম সময়ের এই ক্ষমতায় দুর্বল অর্থনীতি চাঙা করার চেষ্টা করছিলেন তিনি। তবে এর মধ্যেই তিনি জনপ্রিয়তায় বড় ধাক্কা খেয়েছেন। গত সপ্তাহের এক জরিপে দেখা যায়, তার জনপ্রিয়তা নেমে এসেছে মাত্র ৯ দশমিক ২ শতাংশে, যেখানে মার্চে ছিল ৩০ দশমিক ৯ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে ৮১৭ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে। এটি দীর্ঘদিন ধরে নানা সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ফরাসি ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ের এই সীমান্ত নিয়ে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছে।